ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নবগ্রাম শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা নৌকা

নবগ্রাম শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা নৌকা

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় ও দক্ষিণ চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় চরম ভোগাস্তিতে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বর্ষা মৌসুমে চলাচলের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা, ভোগান্তির অবসানে এলাকাবাসী দাবি পাকা রাস্তার ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে এলাকার জনসাধারণ মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ চলবল খা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনামের সঙ্গে চলছে স্কুলটি, শিক্ষার মানও ভালো। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে ৩৭নং দক্ষিণ চলবল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি হরেকৃষ্ণ পাগলের আশ্রম। এখানেও  দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

স্কুল দুটি ও হরেকৃষ্ণ পাগলের আশ্রমটি মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ার পরও  লেখাপড়ার মান ভালো থাকায় গোপালগঞ্জ এলাকার অনেক শিক্ষার্থীরাও দক্ষিণ চলবল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যায়। এছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আশ্রমে প্রাথর্ণা করার জন্য অনেক ভক্তের সমাগম ঘটে। যাতায়াতের রাস্ত না থাকার কারণে প্রতিদিনই ছোট ডিঙ্গি নৌকা বেয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতে মাঝে মধ্যেই ঘটে দূর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় পানিতে পড়ে গিয়ে কাপড়, বই ভিজে যায়। এতে  যেকোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা আশংঙ্কা রয়েছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় শিক্ষার্থীরা জমির আইল দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ধান ক্ষেতে পড়ে বইখাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটে।

দক্ষিণ চলবল খা গ্রামটিতে প্রায় পনেরো শত  লোকের বসবাস। তাদের হাট বাজার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে  যেতে হলে নৌকায় চরে পাকা রাস্তায় উঠতে হয়। তাই তাদের যাতায়াতের এক মাত্র মাধ্যম ছোট ডিঙি নৌকা।

অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, রাস্তা না থাকায় বর্ষাকালে আমাদের  নৌকায় করে স্কুলে আসতে হয়। অনেক সময়  নৌকা  থেকে পড়ে গিয়ে বই-খাতা সব ভিজে যায়। স্কুলের জন্য একটা রাস্তা নির্মাণ হলে আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে অনেক সুবিধা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিবাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, আমরা এলাকায় যারাই বসবাস করি,তারা খুবই যাতায়াতের সমস্যায় আছি। নিন্ম এলাকায় রাস্তা যাও আছে,তা সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায়। পরে  নৌকাই আমাদের ভরসা। সব চেয়ে বেশী কষ্ট করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখানে জরুরী প্রয়োজন রাস্তার।

দক্ষিন চলবল খা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র হালদার বলেন,বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়ে অদ্যাবর্তি অত্যান্ত শুনামের সাথে পাঠদান হয়ে আসছে। জেএসি ও এসএসসি পরিক্ষার ফলাফল শতভাগ পাশ।এখানে অত্যান্ত মান সম্মত শিক্ষা প্রদান করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যাতায়াতের রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকা  বেয়ে স্কুলে আসে,অনেক সময় নৌকা থেকে পরে বই খাতা ভিজে যায়। তাই নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে দক্ষিন চলবল কা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ভরৎ সরকারের বাড়ি এবং ভক্তবাড়ির ব্রীজ থেকে  মেজর জয়ধর এর বাড়ির ব্রীজ পযর্ন্ত একটি রাস্তা খুবিই প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, রাস্তা না থাকায় অনেক  ভোগান্তি হয়। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে চায় না। অভিভাবকরা বাচ্চাদের দিতে চান না। বর্ষা মৌসুমে সমস্যা আরও বেশি হয়। ডিঙি নৌকা দিয়ে আসতে গিয়ে অনেক সময় পড়ে বইখাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে সব  শ্রেণি মিলিয়ে স্কুলে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১৫০ জন।

হরে কৃঞ্চ পাগলের আশ্রমের সহ-সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিবছর আশ্রমে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠান হয়। দুরদূরান্ত  থেকে অনেক ভক্তবৃন্দ আসে। কিন্তু রস্তা না থাকায় আসা যাওয়ার অনেক সমস্যা । আমাদের দাবি সরকার যাহাতে খুবই দ্রুত একটি রাস্তা নিমার্ন করে দেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিন্টু লাল বালা বলেন, নবগ্রাম মিশন বাড়ি থেকে যে রাস্তাটি স্কুল পযর্ন্ত আছে,তাও ভাংগা-চুরা চলাচলের উপযোগি না এবং নিচুঁ হওয়ায় সামান্য বর্ষায় পানিতে ডুবে যায় এবং স্কুল  থেকে ভরৎ সরকারের বাড়ি পযর্ন্ত  কোন রাস্তা না থাকার কারনে চরম  ভোগান্তিতে শিক্ষক,শিক্ষার্থীসহ এলাকার জনসাধারন।

এছাড়াও নবগ্রাম ইউনিয়নের এলাকাবাসী দক্ষিন চলবল খা উচ্চ বিদ্যালয় ও দক্ষিন চলবল খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাকা রাস্তা নির্মানের জোর দাবী দাবী জানিয়েছেন ।

সংবাদটি শেয়ার করুন