ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় ডুবেছে পাঠদান

বন্যায় ডুবেছে পাঠদান

হবিগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১২টি কলেজসহ সাড়ে ৫শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৯টি কলেজসহ ৪৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া জেলার এক হাজার ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ এবং অগ্রিম ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার মানোন্নয়ন। ফলে শিক্ষার্থীদের আশানুস্বরূপ ফলাফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কারণে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক অভিভাবক।

অন্যদিকে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও সেসব প্রতিষ্ঠান এখনও পাঠদানের উপযোগী হয়নি। এর ওপর আবার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রমতে, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ৫২টি। চলমান বন্যায় সাত উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়া ৪৫৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে নবীগঞ্জে রয়েছে ১০৮টি, বানিয়াচংয়ে ১৬৬টি, মাধবপুরে ৫৪টি, লাখাইয়ে ৪৫টি, আজমিরীগঞ্জে ৫৮টি, বাহুবলে ৯টি ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪টি। এসব বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ৩৪৩টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে গত ২৮ জুন জেলার এক হাজার ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম ঈদের ছুটি দেয়া হয়েছে। সঙ্গে রাখা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ছুটির ঘোষণা। আগামী ১৭ জুলাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বা পাঠদান কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

সূত্রমতে, জেলায় ২৭৮টি নিম্ন ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্যায় কবলিত হয়েছে ৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যাদুর্গতদের জন্য ১১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বানিয়াচংয়ে ৪০টি, নবীগঞ্জে ২০টি, লাখাইয়ে ১২টি, আজমিরীগঞ্জে ১১টি, মাধবপুরে ৩টি ও হবিগঞ্জ সদরে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি রয়েছে। তাছাড়া ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানিবন্দি রয়েছে ১২টি কলেজ। এর মধ্যে রয়েছে আজমিরীগঞ্জ মহাবিদ্যালয়, পাহাড়পুর আদর্শ কলেজ, জনাব আলী ডিগ্রী কলেজ, বানিয়াচং আইডিয়াল কলেজ, নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, র্কীতি নারায়ন কলেজ, দিনারপুর কলেজ, আবু জাহির মডেল কলেজ, কবির কলেজিয়েট একাডেমী, আলেয়া জাহির কলেজ ও হাজী চেরাগ আলী কলেজ।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আজমিরীগঞ্জ মহা বিদ্যালয়, পাহাড়পুর আদর্শ কলেজ, জনাব আলী ডিগ্রী কলেজ, বানিয়াচং আইডিয়াল কলেজ, নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, র্কীতি নারায়ন কলেজ, দিনারপুর কলেজ ও লাখাই মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রী কলেজকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬টি উপজেলায় ১০/১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্রের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। তবে পানি না কমায় চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি।

এদিকে, জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বন্যা কবলিত ৫৪৯টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পাঠদান পুরোপুরি ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে আবার ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে পাঠদানে বিরত থাকতে হচ্ছে। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠদান শুরুর পর এবারই বড় সংকটে পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে আশানুরূপ ফলাফল করা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম জানান, আগামী ১৭ জুলাই ছুটি শেষ হবে। এর মধ্যে পানি কমলে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু করা হবে। তবে পানি না কমলে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা নিয়ে সমস্যা হতে পারে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হলেই সরকারি নিয়মানুযায়ী যথারীতি পাঠদান শুরু করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন