দক্ষিণ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি (এসএইউ)তে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী কমানো, নতুন সিজিপিএ নির্ধারণসহ নানা কারণে অচলবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছে। তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার হুমকিতে অচল রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ফ্রিশিপসহ স্টাইপেন্ড এর আওতাভূক্ত করতে দুই সপ্তাহব্যাপী ক্লাস বয়কট কার্যক্রম চলছে।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৪২ জন যা ২০২১ সালে কর্তৃপক্ষ সেটি কমিয়ে ৮৮ জনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষাবৃত্তি নবায়নের জন্য সর্বোচ্চ সিজিপিএ ছিল ৪.৫ পয়েন্ট (সামাজিক বিজ্ঞান শাখা) এবং ৫.০ (বিজ্ঞান শাখা) সেটা বাড়িয়ে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সকল শাখার জন্য ৬ করা হয়েছে। যা ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে মিনিস্ট্রি অব ইক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের নির্দেশে ৬.৫ এ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উপরন্তু কর্তৃপক্ষ চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস পরীক্ষা চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। অঞ্চলভেদে ইন্টারনেটের সমান এবং পর্যাপ্ত গতি না থাকায় এবং উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া সিজিপিএ নিশ্চিত করা দূরহ হয়ে পড়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান থেকে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষস্থান হিসেবে পরিচিত পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা এবং ‘শিক্ষাবৃত্তি নীতিমালা’ অপ্রত্যাশিতভাবে রদবদলের জন্য অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেমিস্টারের মাঝ পর্যায়ে এসে ড্রপআউট করতে বাধ্য হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় শিক্ষাবৃত্তি কমিয়ে আনা এবং সময়মত শিক্ষাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে না দেয়াকে দায়ী করছে।
তারা জানান, বর্তমানে শ্রীলংকা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধবিধ্বস্থ আফগানিস্তানে তালেবান সরকার সকল নাগরিকের ব্যাংক কার্যক্রম বাজেয়াপ্ত করেছে এবং আফগান শিক্ষার্থীদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। নেপাল ও ভূটানে উচ্চমূল্যের অথচ ধীরগতির ইন্টারনেট কিনে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে মধ্যবিত্ত ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা সাধ্যাতীত সেমিস্টার ফি দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হিমসিম খাচ্ছে। এতসব সমস্যার মুখে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে উদাসীন থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বয়কট করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কর্তৃপক্ষ স্কলারশিপ/ফ্রিশিপ তালিকা প্রকাশ করেনি এবং শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেও পুরোনো শিক্ষাবৃত্তি নীতিমালায় প্রত্যাবর্তন করেনি।
তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড, ফরমাল লেটার ও বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসে ভিসা সংক্রান্ত চিঠি প্রদান করেনি। এরকম অচলাবস্থা চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম পুরোপুরি ভেঙ্গে যাবে বলে তাদের অভিমত। উপরন্তু উচ্চমূল্যের সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে না পারায় এবং শিক্ষাবৃত্তি না পাওয়ায় বহু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের মাস্টার্স প্রোগ্রাম থেকে ড্রপআউট করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি ইন্সটলমেন্টের (কিস্তি) মাধ্যমে সেমিস্টার ফি প্রদানের ব্যবস্থা করা হলেও এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ২০ মার্কিন ডলার (১৭২৮/বাংলাদেশি টাকা) কর্তন করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা শিক্ষার্থীবান্ধব নীতিমালার পরিপন্থি। প্রশাসনে এহেন অসহায়তা এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী।
তারা আরও বলেছেন, প্রশাসনের নতুন শিক্ষাবৃত্তি নীতিমালা এবং বিবিধ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী যা শিক্ষাকার্যক্রমকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনকে বাধাগ্রস্থ করছে। শিক্ষার্থীরা নামভিত্তিক শিক্ষাবৃত্তি নীতিমালার পরিবর্তে পরিবর্তনশীল শিক্ষাবৃত্তি ও সকল শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলোক স্টাইন্ডেসহ ফ্রিশিপ তালিকা প্রকাশের এবং দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তনের দাবি করছেন। ভারতের বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের (এমনকি দিল্লীর বাইরের রাজ্য থেকে আসা শিক্ষার্থীদের) ক্ষেত্রে ফ্রিশিপ শুধুমাত্র শিক্ষা ও হোস্টেল ভাতা মওকুফ করে কিন্তু বহিরাগত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সরঞ্জাম, থাকা, খাওয়া ও ভ্রমণের অর্থ সরবরাহ করে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, যদি কর্তৃপক্ষ তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয় তাহলে ক্লাস বয়কট আরও দীর্ঘ হবে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মানবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে না। অতএব শিক্ষার্থীগণ উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তোরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সার্ক কর্তৃপক্ষ, মিনিস্ট্রি অব ইক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের এবং সকল সার্কভূক্ত দেশের সরকারদের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
আনন্দবাজার/টি এস পি