সোমবার, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে বিলীন হচ্ছে বাঁশের তৈরি সামগ্রী

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। প্লাস্টিক পণ্যের প্রভাবে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি সামগ্রী । ফলে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কারিগররা বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, সারাদেশের বাঁশের চাহিদা পূরণ করে নীলফামারী। কিন্তু বাঁশের অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে দেখা দিয়েছে তাদের ব্যাপক দুর্দিন। বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে তারা এখন একেবারেই কোনঠাসা।

 জেলার ডিমলা সদর ইউনিয়নের তিতপাড়ায় বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় ৫০টি পরিবার। এছাড়া এই জেলার ২৫০টি পরিবার বাঁশ দিয়ে নানা সামগ্রী বানিয়ে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সাত পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে কোনোরকম ভাবে ধরে রেখেছেন তারা। ফলে বর্তমানে উৎপাদিত সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য না থাকায় এই শিল্পের সাথে যুক্ত অনেকেই বর্তমানে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।

জেলা শহরে বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করতে এসে জামিনুর রহমান জানান, একসময় বাঁশ দিয়ে বানানো মাছ রাখার খলই, ডুলি, চালা, ঢাকি কুলা, খাঁচা, চলনি, চাটাই, ঝুড়ি পলো, ডারকির খুব চাহিদা ছিল সবার কাছে। বাজারে তোলার পর ক্রেতা সামলাতে প্রায় হিমশিম খেতে হতো তাদের। কিন্তু বর্তমানে হাটে আসা-যাওয়ার ভ্যান ভাড়াই ওঠে না। আগে ধান রাখার একটি বড় ডুলি বিক্রি হতো ৭০০-৮০০ টাকা। চাহিদাও ছিল প্রচুর। কিন্তু এখন সেই ডুলির ক্রেতাই নেই।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁশ গবেষণা কেন্দ্র। ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচে বাংলাদেশ বন গবেষণা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুই একর জমির ওপর কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। এখানে বাঁশের নানা প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাবান্ধা বন্দরে স্বাভাবিক আছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি

এছাড়া জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বাঁশ-বেত নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রিফ। এর ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব উল্লেখ করেন, বাঁশ চাষ ও নানা প্রযুক্তি সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে নিয়মিত।

তিনি জানান, আশার কথা, বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বাজারজাত এবং রফতানিমুখী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নীলফামারী ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবস্থাপক (বিসিক) হোসনে আরা খাতুন বলেন, দিন দিন বাঁশের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার কমছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশের তৈরি সামগ্রীর জায়গা দখল করছে প্লাস্টিক পণ্য। এর ফলে বিপাকে পড়েছে এই শ্রেণিপেশার মানুষ। তবে বিছিন্নভাবে তাদের সহায়তা করার কোনও সুযোগ আমাদের নেই।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরীর আশ্বাস জানান, বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা প্রদানের সুযোগ থাকলে তা অবশ্যই দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন