শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারসাজিতে ধান-চালের বাজারে অস্থিরতা

কারসাজিতে ধান-চালের বাজারে অস্থিরতা
  • ধানক্রয়ে মৌসুমী ফড়িয়াদের কোটি কোটি টাকা লগ্নি

আমনের ভরা মৌসুমে খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত্ব জেলা নীলফামারী। তবে এখানে ধান-চালের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। গ্রামের হাট-বাজারে ক্ষণে ক্ষণে ধান-চালের দরপতনের মূলেই রয়েছে মিল মালিকদের কারসাজি। তারা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে হাটে হাটে নিয়োগ করেছেন মৌসুমী ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ীদের। আর মূলত তারাই এলাকার হাটা-বাজারে তাঁবু খাটিয়ে নানান কূটকৌশলে ধানের দরপতন ঘটিয়ে ইচ্ছেমতো দামে ধান ক্রয় করছেন। ধান সংগ্রহে এলাকার হাট-বাজার ছাড়াও গ্রামে গ্রামে ভাড়া করা হচ্ছে বড় বড় গুদাম ঘরের।

সূত্র জানায়, সস্তা দরে কেনা ধান কৃষকের গোলাতেও রাখছেন কেউ কেউ। আবার কোথাও কোথাও কৃষকের জমি থেকেই ধান কিনছেন মৌসুমী ধান ব্যবসায়ীরা। সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-চাল বিক্রিতে নানান জটিলতাও এর জন্য দায়ি বলে অনেকেই মনে করছেন। এতে আমনের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে যেমন হাঁসি নেই, তেমনি চাল ক্রেতাদের মুখও মলিন। ধানের দরপতন হলেও ক্ষণে ক্ষণে চালের মূল্য বৃদ্ধি কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছেনা।

নীলফামারীর সবচেয়ে বড় শাখামাছা বাজারে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সকল প্রকার চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা। যেন চাল ব্যবসায়ী ও মিলারদের পোয়াবারো অবস্থা। তাদের ইশারা ইঙ্গিতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এখানকার চালের বাজার। দু’দিন আগেও যে মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল সে চাল এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ২৮ চাল এক লাফে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৩ টাকা পাইকারি এবং খুচরা বাজারে তা ৬৪-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে মিনিকেট চালেরও। ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও দুই দিনের ব্যবধানে তা এখন ৭৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্ববাজারে চালের দামে রেকর্ড

খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, চালের বাজার অস্থিরতার মূলেই হচ্ছে অসাধু মিল মালিকরা। আমনের ভরা মৌসুম তার উপর স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত চালের মজুত থাকার পরেও মিল মালিকদের কারণেই চালের বাজার বেসামাল হয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ মিল মালিকরাই নিয়ন্ত্রন করছেন চালের বাজার। তাদের ইশারা-ইঙ্গিতেই ওঠানামা করে চালের দাম। মিলমালিক ও চাল আড়ৎদারদের গুদামে হাজার হাজার মণ ধান-চাল মজুত থাকার পরেও বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধির পিছনে বাজার মনিটরিং না থাকাকেও দায়ী করছেন অনেকে। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করছে, জেলার ৯০ ভাগ হাসকিং মিল বন্ধ থাকায় গুটি কয়েক অটোরাইস মিলের কব্জায় চলে গেছে ধান-চালের ব্যবসা। স্থানীয় ভোক্তাদের অভিযোগ বাজারে মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যাবসায়ীরা ইচ্ছেমতো চাল, ডাল, তেল, চিনি থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রন করছেন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে স্থানীয় চালকল মালিক, ডিলার ও ব্যবসায়ীদের আড়তে হানা দেয়ার পাশাপাশি এলাকার গ্রামেগঞ্জে গুদাম ভাড়া নিয়ে অবৈধ মজুতদারির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া গেলে চোখের পলকেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩ লাখ ২৮হাজার ২৪ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ছাড়িয়ে গেছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়। অপরদিকে নীলফামারী শাখামাছা বাজারে কাঁচাবাজার ও মাছ বাজারের অবৈধ আড়ৎদাররা মাছসহ কাঁচা তরিতরকারির বাজার নিয়ন্ত্রন করায় চাষি-ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ন্যাযমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন