ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিসিবির লাইনেও সিন্ডিকেট

ট্রাক সেল লাইনে কাটছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান ক্রমে বেড়েই চলেছে। তেল-ডালসহ একাধিক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় ক্রমশ লম্বা হচ্ছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেলের সামনের লাইন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন দ্রব্যের দাম বাড়ায় সরকারের করার কিছু নেই। পরিস্থিতি সামলাতে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও সংসারের খরচ সামলাতে টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, নতুন বছরের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম ক্রয় সীমা পার হয়েছে। চাল আটা তেল, ডাল, চিনির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গত জানুয়ারিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টিসিবি মসুর ডালের দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছে ৬৫ টাকায়। ওই দিনই টিসিবি ট্রাক সেল শুরু করে। যা এখনও চলছে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম ছিল ছয় দিন। দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলার ডিলার পয়েন্টে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারছে। প্রত্যেক ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও দুই লিটার তেল কিনতে পারছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা মূলত তেল, ডাল ও চিনির জন্যই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

রাজধানী মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে বক চত্বরে প্রতিদিনই বাড়ছে টিসিবির ক্রেতার ভিড়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের মাতুয়াইলের মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে শত শত মানুষের লাইন দেখা যায় সকাল ৯টার পর থেকেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওভারব্রিজ ঘেঁষে এই লাইন রায়েরবাগের দিকেও বাড়তে থাকে। একই চিত্র শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডের সামনেও। দনিয়া কলেজের গেট ধরে লাইনে দাঁড়ানো শত শত নারী-পুরুষ টিসিবির পণ্য কেনার অপেক্ষায়।

গাড়ি আসতে সাড়ে ১১টাও ছাড়িয়ে যায়। তবু লাইন ছেড়ে যায় না কেউ। দুই লিটার তেল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে অনেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন টানা দুই-তিন ঘণ্টা। টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই তাদের। নিম্নবিত্তদের সঙ্গে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। অনেকে লজ্জায় আবার কিছুটা দূরে অন্য এলাকায় গিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছে পণ্য কিনতে।

টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে মুখ লুকিয়ে ফেলেন। তবে অনেকেই বলছেন মুখ লুকানোর কিছু নেই। কম দামে পণ্য কিনে কিছুটা ব্যয় কমাতে চেষ্টায় লজ্জার কিছু নেই। কিছুদিন আগেও টিসিবির লাইনে নিম্নআয়ের মানুষেরাই দাঁড়াতো। এখন মধ্যবিত্তরাও দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।

টিসিবির অনেক ক্রেতাই আনন্দবাজারকে জানান, জীবনযাত্রার ব্যয় যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই। টিসিবির নির্ধারিত কোনো নিয়ম নীতি না থাকায় অসাধুরা বারবার মাল উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ আছে। সুযোগ বুঝে একটি চক্র একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছে ও মুনাফার আশায় চড়া দামে বাজারে বিক্রি করছে। টিসিবি ও ডিলারদের লোক বলে পরিচিতরা এভাবে একাধিক বার মাল উত্তোলন করছে।

টিসিবির সূত্রমতে, সারাদেশে ৪৫০টি পয়েন্টে এখন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০১টি পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি ও ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, সাধারণ আয়ের মানুষদের কিছুটা স্বস্তি দিতেই সরকার ভর্তুকি দিয়ে তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করছে। খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে একইভাবে ভর্তুকি মূল্যে আটা ও চাল বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে তেল, চিনি ও ডালের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছুই করার নেই। কৃষির প্রতিবেদন পরীক্ষা করলে আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই। চলমান পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিনা তা ভাবার দরকার।

খাদ্য আইন অনুযায়ী গুদামজাত নীতিমালায় সরকার অভিযান চালালে বিপাকে পড়তে পারেন অনেকেই। দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় সাড়ে তের হাজার খাদ্য গুদাম রয়েছে। পরিত্যক্ত গরুর ফার্মে, পাটের গুদাম খাদ্য গুদাম হিসেবে ব্যবহার কতটুকু আইনসিদ্ধ তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, গুদামের বাইরে ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ নোটিশ থাকায় অনেক জায়গায় অভিযান চালানো যাচ্ছে না।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন