ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করলাতেই কোটি কোটি টাকা

করলাতেই কোটি কোটি টাকা
  • মাদারীপুরে ২৫ কোটি টাকার বিক্রি

সবুজের মাঠের মাঝ হলুদের ছোঁয়া, নজর পড়তেই যে কারও মনোমুগ্ধ হয়ে ওঠে। চোখ ঝলসানো কি অপরূপ দৃশ্য। বলছি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের কথা। দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত ফসলের মাঠ। সবুজ মাঠে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে এক চিলতে হলুদের সমারোহ। যেন হলুদ চাদরে ঢাকা পড়েছে বিস্তীর্ণ মাঠ। সবুজ রঙের লতানো গাছের পাতার ফাঁকে হলুদ রঙের ফুল। আর তার মধ্য থেকেই উঁকি দিচ্ছে চকচকে সবুজ রঙের ‘উচ্ছে’ বা করলা। উচ্ছের মিষ্টি হাসিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার চাষিরা। স্থানীয়রা উচ্ছে-কে উস্তাও বলে।

মাঠের পরে মাঠ চলতি মৌসুমটিতে শুধুই উচ্ছে চাষ হয়। এ উচ্ছে চাষ করার পরে, উচ্ছে তোলার মধ্য সময় এই গ্রামের চাষিদের মধ্যে থাকে এক অন্য ধরনের উৎসব। এ অঞ্চলের উচ্ছে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামটি এখন পরিচিত ‘উচ্ছে গ্রাম’ হিসেবে। এলাকার বাসিন্দা আরিফ সরদার জানান, বেশ কয়েক বছর আগে থেকে এ অঞ্চলে হঠাৎ করেই ব্যাপকভাবে উচ্ছে চাষ বেড়ে যায়। জমিগুলো উচ্ছে চাষের উপযোগী হওয়ায় জমিতে ফলনও হয় বেশ। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের কৃষকরা সবাই ঝুঁকে পড়েন উচ্ছে চাষে। এতে করে আশেপাশের জেলায় এ অঞ্চলের উচ্ছে সম্পর্কে সবাই জানতে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের পরে মাঠ শুধুই উচ্ছে ক্ষেত। উচ্ছে সংগ্রহ করার জন্য সকাল থেকে মাঠে ব্যস্ত ছিলো চাষি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। লতার ভেতর থেকে বিক্রির যোগ্য উচ্ছে খুঁজে খুঁজে বের করে আনছেন তারা। হাতের সাহায্যে লতা থেকে উচ্ছেগুলোকে ছিঁড়ে রাখছেন ছোট ছোট বালতিতে। বালতি উচ্ছেতে ভর্তি হয়ে গেলে তা আবার বাঁশের তৈরি চাঙারিতে ঢালা হচ্ছে। একসময় চাঙারি ভর্তি হয়ে গেলে চাষিরা তা নিয়ে ছুটছে বাজারের দিকে বিক্রির উদ্দেশ্যে।

কালকিনি উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১০ সাল থেকে কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে উচ্ছের চাষ শুরু করে স্থানীয় কৃষকরা। এই অঞ্চলের জমি উচ্ছে চাষের উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন আসা শুরু করে। বাজারে উচ্ছের চাহিদা থাকায় এবং সাথে ভালো দাম পাওয়ায়, দিন দিন এই অঞ্চলে বাড়তে থাকে এ চাষের জমি ও চাষি সংখ্যা।

বর্তমানে লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে উচ্ছে। যা থেকে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৮ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। এখানে রানী পুকুর, রানী পুকুর-৩৫ ও দেশি এই ৩ জাতের উচ্ছে চাষ করা হয়। উচ্ছের বীজগুলো মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেতকা গ্রাম থেকে সংগ্রহ করে এখানকার চাষিরা।

লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের উচ্ছের আড়দারদের সভাপতি আবজাল হোসেন বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে আমাদের এখানে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার উস্তা বিক্রি হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলার অন্তত ১০টি ট্রাক এখান থেকে উস্তা নিয়ে যায়। সরকার যদি আমাদের এদিকটায় আরেকটু নজর দেয়, তবে আশা করি এখানকার উস্তা প্রতিটি জেলায় পাঠানো সম্ভব।

কালকিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘উচ্ছে চাষ একটি লাভজনক ফসল। লক্ষ্মীপুর এলাকার কৃষকরা উচ্ছে চাষের মাধ্যমে সার্বিকভাবে লাভবান হচ্ছে এবং তাদের সচ্ছলতা দিন দিন বাড়ছে। একটা সময় ওখানকার মানুষ এর আগে কৃষিতে এতোটা এগিয়ে আসতো না। এখন সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আমরা এখানকার চাষিদের কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কৃষকদের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। সার প্রয়োগ, কীটনাশক প্রয়োগ, রোগবালাই দমনে সার্বক্ষণিক সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন