ঢাকা | রবিবার
২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগে ঝুঁকি বেড়েছে ডিএসইতে

বিনিয়োগে ঝুঁকি বেড়েছে ডিএসইতে
  • গেইনারে ৬০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটগরি

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনার তালিকায় ৬০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটগরির কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। ওই সপ্তাহে টপটেন লুজার তালিকায় ৫০ শতাংশ ছিল ‘এ’ ক্যাটগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট। টপটেন লেনদেনে তালিকায় ৮০ শতাংশ ছিল ‘এ’ ক্যাটগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট।

এদের মধ্যে গেইনার তালিকায় ৪০ শতাংশ ‘বি’ক্যাটাগরি শেয়ারের অবস্থান করেছে। লুজার তালিকায় ৩০ শতাংশ ‘জেড’ক্যাটাগরি, ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং ১০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরি শেয়ারের অবস্থান করেছে। এছাড়া লেনদেন তালিকায় ২০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি শেয়ারের অবস্থান করেছে। এই ধরনের চিত্রকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ডিএসইর সূত্রমতে, গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৭ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৭ শতাংশ। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগের জন্য পিই রেশিও এক ঘরের সংখ্যা নিরাপদ। এই নিরাপদ সংখ্যা ১৫ পর্যন্ত ধরা যেতে পারে। তবে ১৫ সংখ্যার ঊর্ধ্বে চলে গেলে বিনিয়োগে ঝুঁকিরমাত্রা বাড়তে থাকে। ডিএসইর পিই রেশিও বর্তমানে ১৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সেই হিসেবে ডিএসইতে বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা নিরাপদ অবস্থানে এখনো আসেনি। ডিএসইতে বিনিয়োগ মাত্রা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটগরির থেকে তুলনামূলক ভালো বিধায় নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটগরির কোম্পানির শেয়ার।

যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটগরির কোম্পানির শেয়ার। আবার যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটগরির কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া ‘এন’ ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ক্যাটাগরি তালিকায় রয়েছে।

দেখা যায়, সপ্তাহ শেষে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ব্যাংক খাতের ৯ দশমিক ৭২ পয়েন্টে, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের ১৩ দশমিক ১৯ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৬ দশমিক ৯২ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ৫৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে, ওষুধ রসায়ন খাতের ২০ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রকৌশল খাতের ২৩ দশমিক ৭০ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২৬ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে, সেবা আবাসন খাতের ২৬ দশমিক ৯২ পয়েন্টে, বীমা খাতের ২৮ দশমিক ১৩ পয়েন্টে, খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের ৩১ দশমিক ২১ পয়েন্টে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৩৩ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট, সিরামিক খাতের ৬৭ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট, পাট ৭১ দশমিক ২২ পয়েন্ট, ভ্রমণ-অবকাশ খাতের ৬০ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট, পেপার খাতে ৮০ দশমিক ৭২ পয়েন্ট এবং চামড়া খাতের ৮৮ দশমিক ১৯ পয়েন্টে পিই রেশিও অবস্থান করেছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬৪টির বা ৪২ দশমিক ৩৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির বাংলাদেশ শিপিং কর্রপোরেশন শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ওই সপ্তাহের লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৬ দশমিক শূন্য ১ টাকা। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনারে তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। ওই সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৮৫টির বা ৪৭ দশমিক ৮০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সপ্তাহটিতে ‘জেড’ ক্যাটাগরির সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে। ওই সপ্তাহের লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১২ দশমিক ৬০ টাকা। এ কমার মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ওই সপ্তাহে টপটেন গেইনারের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটলাস বাংলাদেশ (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ডেফোডিল কম্পিউটারস (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ঢাকা ডায়িং (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, সোনালী পেপার ১২ দশমিক ২১ শতাংশ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ১১ শতাংশ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস(‘বি’ ক্যাটাগরি) ১০ দশমিক ৯১শতাংশ এবং বাটা সুজ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।

এছাড়া টপটেন লুজারের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রান ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, স্টাইল ক্রাফট ৭ দশমিক ২২ শতাংশ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, সোনালী আশঁ ৭ শতাংশ ১৩ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স (‘এন’ক্যাটাগরি) ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক (‘জেড’ ক্যাটাগরি) এবং মেঘনা পেট (‘জেড’ ক্যাটাগরি) ৬ দশমিক ১২ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন