ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোপনে জ‌মি-সম্পদ বি‌ক্রির চেষ্টা করছে এস আলম গ্রুপ, কেউ কিনবেন না: ‌গভর্নর

গোপনে জ‌মি-সম্পদ বি‌ক্রির চেষ্টা করছে এস আলম গ্রুপ, কেউ কিনবেন না: ‌গভর্নর

নানা অনিয়ম করে ব্যাংক লুটপাটের সঙ্গে জড়িত আলোচিত চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কোনো সম্পদ না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

নামে-বেনামে থাকা জ‌মি-সম্পদ গোপনে বি‌ক্রি করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ সম্পদকে আমানতকারিদের সুরক্ষায় ব্যবহার করতে চাই। এ বিষয়ে শিগগির আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

এস আলম গ্রু‌প ও তা‌দের স্বার্থসং‌শ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংকের লেন‌দেন ঋণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন প্রতিষ্ঠান‌টি নামে-বেনামে থাকা বি‌ভিন্ন জ‌মি-সম্পদ বি‌ক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার। তাই রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এই মুহূর্তে এস আলম গ্রুপের জ‌মি ও সম্পদ কিনবেন না। বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে গোপনে সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে এস আলম গ্রুপ। আইনি জটিলতার কারণে এখনি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শিগগিরই আইনি উপায় খুঁজে বের করা হবে। তাই সর্বসাধারণকে সাবধান করা হচ্ছে, এস আলম গ্রুপের সম্পদ কেউ কিনবেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এসব সম্পদ জনগণের। এখানে কেউ হাত দেবেন না।

এসময় তিনি ইসলামী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া কেলেঙ্কারি এবং পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে তিনি বলেন, এ রকমভাবে, এত বিস্তৃতভাবে, সুপরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। বিশ্বে আমি এর চেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি আর দেখিনি। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমাদের জন্য এটা একটি শিক্ষণীয় মডেল। তবে এটা এড়িয়ে চলতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে বসব। তাদের আমি এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। তারা আমাদের একটি কর্মপরিকল্পনা দেবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই, কাজ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেই কাজ করতে হবে। বোর্ড এখানে কোনো মালিক নয়, তাই তাদের সরকারের স্বার্থে, ব্যাংকের স্বার্থে এবং আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বোর্ড দিয়েছি, দরকার হলে বোর্ড চেঞ্জ করব। প্রত্যেকেই যেন ইফেক্টিভলি এবং নির্মোহভাবে তাদের কাজ করে।

আপাতত কাজ চালানোর জন্য এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর আরও বলেন, খুব শিগগিরই আরও কয়েকটি পুনর্গঠন করা হবে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে এখন ব্যাংক পরিচালনা করবে। ঠিকমতো কাজ না করলে, সেগুলোতেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হবে। ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ওই প্রক্রিয়ায় এখন বাতিল। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং কমিশন বা ট্রাস্কফোর্স এসে যে রকম পরামর্শ দেবে, সেভাবে কাজ হবে।

গভর্নর বলেন, যেহেতু দেশে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। তাই আগামী দুই তিন মাস মূল্যস্ফীতি না–ও কমতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ইনফ্লেশন কমে যাবে। কারণ, মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকেই কাজ করতে হয়—বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাপ্লাই সাইড ঠিক হলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই কমে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর এক ডলারও বিক্রি করা হবে না। তবে সরকারি পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমরা সোনালীসহ অন্য ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছি। যেসব এলসি আগে খোলা হয়েছে, সেসব দায় পরিশোধ, বিদ্যুতের দেনা পরিশোধ এবং সার আমদানির বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মার্কেট থেকেই আমরা ডলার ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রির কোনো পরিকল্পনা নেই। আমানতকারীদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, একসঙ্গে সব টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংক টাকা দিতে পারবে না। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক থেকে তুলবেন না।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে. তবে একটু সময় লাগবে। এত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অতিরিক্ত সুদের লোভেই হোক বা যেকোনো কারণেই হোক, আপনারা এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন। এখন একসঙ্গে সবাই মিলে টাকা তুলতে গেলে হবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন