ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ মাসে বাতিল হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার বিমা পলিসি

৩ মাসে বাতিল হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার বিমা পলিসি

২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৩ গ্রাহক ঝরে পড়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫ গ্রাহক ঝরে পড়ে। গ্রাহকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, পলিসি বিক্রির সময় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য প্রকাশ না করা ও অন্যান্য কারণে এসব বাতিল হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬৭ হাজার ৫৫৫ পলিসি বাতিল হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় স্থানে আছে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স। এর পলিসি বাতিল হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৮১টি। আর আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের পলিসি বাতিল হয়েছে ৩১ হাজার ৬৬৭টি। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান তৃতীয়।

জানা যায়, পলিসি তখনই বাতিল হয় যখন গ্রাহক সময়মতো প্রিমিয়াম শোধ করতে ব্যর্থ হন।

উল্লেখ্য, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের ছয় সদস্য প্রতিষ্ঠানটির ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার পর এস এম ফেরদৌসকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। এছাড়া, ডেল্টা লাইফ ইনসিউরেন্সের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল হক গণমাধ্যমে বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পলিসি ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার পলিসি বাতিল হয়েছে। তিনি জানান, পলিসির সংখ্যা যত বেশি হবে, তত বেশি বাতিল হবে। এটাই স্বাভাবিক। গ্রাহকদের একটি অংশকে চাপ না দিলে তারা সময়মত প্রিমিয়াম দেয় না। তাদেরকে চাপ দেওয়ার দায়িত্ব এজেন্টদের। এরপরও গ্রাহকরা টাকা দিতে ব্যর্থ হলে পলিসি বাতিল হয়। পলিসির চালুর প্রথম বছর এজেন্টরা যে পরিমাণ কমিশন পান দ্বিতীয় বছরে পান এর চেয়ে কম। ফলে তারা বিদ্যমান পলিসি নবায়নের চেয়ে নতুন পলিসি বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। এজেন্টরা অনেক সময় পলিসি বিক্রির সময় সব নিয়ম গ্রাহকদের জানান না। অনেক এজেন্ট এমন পলিসি বিক্রি করে থাকতে পারে যা গ্রাহকের প্রয়োজন নাও হতে পারে। গ্রাহকদের এটি চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।

দেশের অনেক জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধ করতে না পারায় তাদের ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমছে উল্লেখ করে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কাজিম উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, ন্যাশনাল লাইফের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তবে আইডিআরএ এই খাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা ভালো দিক।

দেশের বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ২০২৩-২৪ সালে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৭৩ শতাংশ।

একই সময়ে যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সবচেয়ে কম সংখ্যক পলিসি বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে আইউিআরএ। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আইডিআরএ’র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি পলিসি বাতিল হয়েছে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পরিকল্পনা চাওয়ার পর পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আইডিআরএ’র তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ লাখ ৪২ হাজার গ্রাহক দেখেছেন তাদের পলিসি বাতিল হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিসি বাতিল হওয়া গ্রাহক ও বিমা প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই খারাপ।

সংবাদটি শেয়ার করুন