সচিবালয়ে নতুন ২০ তলা ভবনের জন্য কেনা হচ্ছে ৯টি লিফট ও ২৪০০ টন ক্ষমতার চিলার এসি। এসব লিফট ও এসির প্রাক্-জাহাজীকরণ পরিদর্শনের (পিএসআই) নামে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনজন আমলা ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাতজন প্রকৌশলী।
জানা গেছে, পৃথক তিনটি দলে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ও মালয়েশিয়া ভ্রমণ করবেন তাঁরা। তবে বিদেশভ্রমণের এসব দলে কারিগরি কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন—এমন কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে চলছে কানাঘুষা। সচিবালয়ের নতুন ভবনটিতে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস স্থানান্তরিত হবে। যাদের ব্যবহারের জন্য এসব লিফট ও এসি কেনা হচ্ছে, সেই জনপ্রশাসন বা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কোনো প্রতিনিধি নেই পিএসআই দলে। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সেখানকার কর্মকর্তাদের মধ্যেও। কথা উঠেছে, ঠিকাদারের উপঢৌকন হিসেবে এই সফরে যাচ্ছেন গণপূর্তের কর্মকর্তারা। এর বিনিময়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নেওয়ার সুবিধা পান ঠিকাদারেরা।
এদিকে সম্প্রতি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা অফিস আদেশে ১০ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের তথ্য জানা গেছে। আদেশমতে, কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থাপনার জন্য ২৪০০ টন চিলার এসি কিনতে চলতি মাসের ১৬ থেকে ২০ মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ নূর মোহাম্মদ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বখতিয়ার আহমেদের ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ছিল। একই সময়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নায়লা আহমেদ, অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুশফিক আহমেদ ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া লিফট কেনার কাজে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাকিলা জেরিন আহমেদ, গণপূর্তের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়রা বিনতে রেজা, প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার (নির্বাহী প্রকৌশলী) মাহফুজুল আলম, স্থাপত্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনাজ মাসুদের ১০ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ছয় দিন সুইজারল্যান্ড সফরের কথা বলা হয় পৃথক আরেকটি অফিস আদেশে। তবে এখনো এই ১০ জনের কেউ বিদেশে যাননি বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
এ ধরনের সফর মূলত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনোনীত করে থাকেন। এখানে আমার বলার কিছু নেই বলে গণমা্ধ্যমে জানিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ নূর মোহাম্মদ।
জানা যায়, সচিবালয়ের ২০ তলা ভবনে ৯টি লিফটের জন্য ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি লিফট ১৬০০ কেজি ক্ষমতার। বাকি তিনটির দুটি ১ হাজার কেজি এবং একটি ৬৩০ কেজি ক্ষমতার। এ ছাড়া ২৪০০ টন চিলার এসি কিনতে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫১ কোটি ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমে একজন কর্মকর্তা বলেন, লিফট কেনার জন্য ১৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সেখানে কমবেশি ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে এখন ২২ কোটির মতো করা হয়েছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে ফার্নিচার কেনার নামেও ১০ কোটি টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। অথচ একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ফার্নিচার না কিনে যদি প্রতিযোগিতায় কেনা হতো, তাহলে সেখানে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা সরকারের কম খরচ হতো। পিএসআইয়ের নামে বিদেশভ্রমণটি মূলত ঠিকাদারের একধরনের উপঢৌকন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি মূলত কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণের জন্য প্রকল্পে ধরে রাখা হয়েছে। তা বাদ দিলে কোনো ক্ষতি হবে না। সরকারের উচিত যুগ যুগ ধরে চলে আসা এমন অযৌক্তিক খরচ বাতিলের বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া। আর এ নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. নবীরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে পিএসআই বিষয়টি প্রকল্পের প্রাক্কলনে উল্লেখ থাকে। সেখান থেকে ভ্রমণের খরচ সরবরাহ করা হয়। এখন আমরা একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। নতুন যত প্রাক্কলন হবে, সেখানে ভ্রমণের খরচ আলাদা করা হবে। সরকার চাইলে যেন তা বাতিল করতে পারে।