ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিস (আরআইটিইএস) লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ লাইনের জন্য ২০০ যাত্রীবাহী বগি (প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ) কেনার চুক্তি হয়েছে।
সোমবার (২০ মে) রাজধানীর রেলওয়ে ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
রেলওয়রের তথ্যমতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৯ টাকা (ডলার ১১৬ টাকা ৭১ পয়সা)। চুক্তিস্বাক্ষরের আগে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, আমাদের ক্যারেজের খুব সমস্যা। এই মুহূর্তে আপনারা যে আমাদের ২০০ ব্রডগেজ ক্যারেজ দিচ্ছেন, এর জন্য ধন্যবাদ। সরবরাহের সময়টা চুক্তিতে উল্লেখ করা উচিত। এতে করে একটা পরিকল্পনা থাকে যে, এই সময়ের মধ্যে ক্যারেজগুলো পাওয়া যাবে। জরুরি ভিত্তিতে রেলওয়ের ক্যারেজ দরকার। বিশেষ করে দুইটা সেট আগামী দুই মাসের মধ্যে দেওয়া যায়, তবে সেটা ভালো হবে। বাকিগুলো শিডিউল করে নিলে হবে।
এসময় মন্ত্রী বলেন, রেলের কর্মকর্তারা সবাই দক্ষ কিন্তু স্লো (ধীর)। ওনারা চেষ্টা করে না যে, এটা দুই মাসের মধ্যে বা তিন মাসের মধ্যে দেওয়া সম্ভব। ওনারা মনে করে পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে। এটা আসলেই আমার জন্য দুঃখজনক। এখানে ডিজাইনের কোনো বিষয় নয়। বগি তো রেলওয়ে চালাচ্ছেই, শুধুমাত্র নামাজের স্থানটা আপনারা বলে দেবেন। এ ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। এতে করে খুব সমস্যা হবে না।
রেলসচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ অংশে রেলের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে করে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগ বাড়ছে। এর ফলে এসব প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ রেল-যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করবে।
জানা যায়, প্রকল্পের সময় ১ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুন ২০২৬। বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৯ টাকা (ডলার ১১৬ টাকা ৭১ পয়সা)। এতে করে প্রতিটি বগির দাম আসে ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এটি দেবে ইআইবি, যা ম্যাটেরিয়াল চার্জ। এরপর দেশে বগি আসার পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সেটি খালাস বাবদ আরও ৩৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে। এই অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২০ মাসের পর থেকে বগি দেওয়া শুরু হবে, যা চলবে ৩৬ মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৬ মাসের মধ্যে রেলওয়ে এই বগিগুলো পাবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ক্যারেজের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যাত্রীদের আধুনিক, নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা প্রদান, যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রুটে রেল পরিচালনা, পুরোনো ও আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া যাত্রী ক্যারেজগুলো প্রতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।
রেলওয়ে বলছে, বগিগুলো হবে স্টেইনলেস স্টিলের, দ্রুত গতি সম্পন্ন, বগির ছাদে এসি থাকবে, অটোমেটিক এয়ার ব্রেক পদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব হবে। এই বগিগুলো পরবর্তীতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, রেলপথ সচিব হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, ভারতীয় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহুল মিত্তাল, ভারতীয় রেলওয়ের প্রোডাকশন ইউনিটের অতিরিক্ত সদস্য সঞ্জয় কুমার পংকজ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব করপোরেশন মিচেল ক্রেজা ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।