আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বছরজুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির আবাদ। কৃষকরা নানা প্রজাতির সবজি আবাদ করায় বদলে যাচ্ছে আর্থ-সামাজিক অবস্থা। কৃষি অফিসের পরামর্শ আর নিজেদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজি আবাদ করে অনেকেই এলাকায় বাজিমাত করেন।
এরইমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জমিতে লালশাক, পুইশাক,লাউ, বেগুন, টমেটো ঢেড়স,ধনিয়াপাতাসহ নানা প্রকারের সবজি বানিজ্যিক ভাবে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মো: আলম মোল্লা নামে এক কৃষক।
কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিত এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কীটনাশকমুক্ত এসব সবজি মৌসুম অনুযায়ী চাষ করে তিনি এ সফলতা পেয়েছেন। সবজি চাষ করে বছরে আয় করছে ২ লাখ টাকার উপর।
ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় একজন আদর্শ কৃষক হিসাবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তার এই সফলতা দেখে অনেক লোকজন আসছেন সবজি দেখতে ও পরামর্শ নিতে। তার দেখা দেখি অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষক আলম মোল্লা উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিম মিয়ার ছেলে। পরিবারে স্ত্রী, ৪ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন নানা প্রজাতির সবজি চাষের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখানকার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সবজি চাষ কম শ্রমে বেশী লাভ কৃষকরা নানা প্রকারের সবজি আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার হওয়ায় সবজি চাষে কৃষকদের মাঝে মানসম্পন্ন বীজ ও সারসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে আসছে।
সরজমিনে সাহেবনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আবাদকৃত জমির চার দিকে নেট জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া আছে। জমি জুড়ে চারদিকে শোভা পাচ্ছে লালশাক, পুইশাক, লাউ, বেগুন, টমেটো ঢেড়স,ধনিয়াপাতাসহ নানা প্রকারের সবজি। এ যেন লাল সবুজের এক চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। আর গাছে গাছে ঝুলছে ছোট বড় টমেটো, বেগুন আর ঢেড়স, লাউ, সেইসাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লালশাক, পুইশাক,ধনিয়াপাতা । চলছে নিয়মিত সবজির পরিচর্যা।
কৃষক মো: আলম মোল্লা বলেন, এক সময় তিনি প্রাইভেট একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে তিনি চাকুরি থেকে অবসরে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর অবসর সময় কাটতে সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
ছোট বেলা থেকেই সবজি চাষের প্রতি আমার শখ ছিল। কিন্তু চাকুরি করার কারণে তা করা হয়নি। অবসরে বাড়িতে আসার পর সাহেবনগর গ্রামে ৪৫ শতক জায়গার মধ্যে মৌসুম অনুযায়ী গত প্রায় ১৫ বছর ধরে সবজি চাষ করছি। এবার দেশীয় পদ্ধতিতে লালশাক,পুইশাক, বেগুন, টমেটো, ঢেড়স, লাউ, ধনিয়াপাতাসহ নানা প্রকারের সবজি চাষ করা হয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আরও বলেন জমি প্রস্তুত,বীজ,চারা রোপনসহ অন্যান্য খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। এই পযর্ন্ত ৫০ হাজার টাকার উপর নানা প্রকারের সবজি বিক্রি হয়েছে। জমিতে যে পরিমাণ সবজি রয়েছে দর ভালো পাওয়া গেলে আশা করছি আরও ৫০ হাজার টাকার উপর বিক্রি হবে।
আবহাওয়া অনুকুল ও বিক্রিতে দর ভালো পাওয়া গেলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ৮০ হাজার টাকার উপর আয় হবে। জমি উচু হওয়ায় মৌসুম অনুযায়ী সারা বছর সবজি চাষ করা হয়। সবজি চাষ করে বছরে ২ লাখ টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আলম মোল্লা একজন সফল কৃষক। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে নানা প্রকারের সবজি আবাদ করছেন। কৃষি অফিস থেকে জমিতে সবজি চাষ করতে তাকে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে তাকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও পতিত রাখা যাবে না। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজি চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকার কৃষকদেরকে সার বীজসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে আসছে। কৃষি অফিসের তৎপরতায় কৃষকরা সবজি চাষে ভালো সফলতা পেয়েছেন। এরমধ্যে কৃষক আলম মোল্লা সবজি চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেন। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির আবাদ। বেকার ও শিক্ষিতরা সবজি চাষে এগিয়ে এলে একদিকে বেকারত্ব দূর হবে, অপরদিকে উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও তরান্বিত হবে। তিনি সবজি চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।