ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে ৫ বছরে কোটিপতি বেড়েছে ৩০ হাজার

দেশে ৫ বছরে কোটিপতি বেড়েছে ৩০ হাজার

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, কর ফাঁকি, অর্থ পাচার ও দুর্নীতি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সমাজে আয়বৈষম্য বেড়েছে। জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে যখন বেশির ভাগ স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস চলছে, তখন ব্যাংকে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা।

অর্থনীতির যখন টালমাটাল অবস্থা, তখনো একশ্রেণির মানুষ ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ কোটিপতির হিসাব থেকেই এ চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। সংকটের মধ্যেও তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য বা সেবা থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছেন।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, বর্তমানে ব্যাংকে কোটিপতি গ্রাহক ১ লাখ ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ২০১৯ সালেও এ সংখ্যা ৮৪ হাজারের কম ছিল। গত পাঁচ বছরেই দেশে কোটিপতি বেড়েছে ৩০ হাজারের বেশি।

দেশের ব্যাংক খাতের ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার মধ্যে তাঁদের জমানো টাকাই ৭ লাখ ২৭ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এসব কোটিপতির বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ না করে, জমিয়ে রাখায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলেন, মূলত আয়ের বড় ধরনের বৈষম্যের ফলে সাধারণ মানুষের আয় কমলেও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনার প্রথম আঘাত আসে ২০১৯ সালে। এ সময় দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯ জন। আর ২০২০ সালের মার্চে করোনার বছরে কোটিপতি হিসাব দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। আর ২০২১ সালে কোটিপতি বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টিতে। এর পরের বছর ইউক্রেনযুদ্ধে ডলার-সংকট দেখা দেয়। তবুও ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটিপতির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি, যা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫টি। ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪টি। এসব হিসাবে জমা ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫টি। এসব হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের মধ্যে প্রায় ৪৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ দখলে রেখেছেন কোটিপতিরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব ছিল ৫টি, ১৯৭৫ সালে তা দাঁড়ায় ৪৭টিতে। এরপর তা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টিতে উন্নীত হয়।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫টি। সেই হিসাবে বর্তমান সরকারের সময়ে কোটিপতি বেড়েছে ৯৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা।

দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে শুরু করে ৫ কোটি টাকার আমানতের হিসাব দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৬০টি। আমানত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২২১টি হিসাবে সঞ্চয় ৮৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৪টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৯৬৮টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ২৭৪টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ৯১৯টি আমানতকারীর হিসাব। ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৪৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭৪৭টি। তা ছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৭৭৮টি।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, একদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। এর মানে হলো, দেশে আয়বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটি ভালো লক্ষণ নয়। এই বৈষম্য না কমলে অর্থনীতির গতি বাধাগ্রস্ত হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) নিয়েছেন ৯৯ লাখ ৭২ হাজার জন। কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৪০৬টি।

সংবাদটি শেয়ার করুন