ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মারজান দম্পতি মুখে হাসি ফুটিয়েছে জৈব সার

মারজান দম্পতি মুখে হাসি ফুটিয়েছে জৈব সার

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের মারজান আক্তার। তার দেখাদেখি এখন সেখানকার আরও অনেক নারী এগিয়ে এসেছেন কেঁচো সার উৎপাদনে। জৈব এই সার মাটিকে তাজা করে। এর কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। আর দামেও বেশ সস্তা। তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার। বাড়িতে বসেই কেঁচো ব্যবহার করে জৈব সার তৈরি করছেন নারী উদ্যোক্তা মারজাহান আক্তার। নিজেদের জমির চাহিদা মিটিয়ে এখন এই সার বিক্রি করছেন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। দিন দিন বাড়ছে এ সারের চাহিদা। মাসে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আয় করছেন মারজাহান দম্পতি।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরেরর সহয়োগিতায় ২০২১ সালে তিনটি রিং দিয়ে কেঁচো সারের উৎপাদন শুরু করেন মারজাহান ও তার স্বামী তুহিন ভূঞা। তারপর ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন উৎপাদনের পরিধি। বাড়ির উঠানে বিশাল টিনের শেড উঠিয়ে বসিয়েছেন ১৪টি বড় রিং ও ১৬টি ছোট রিং। সার উৎপাদনের জন্য প্রতিটি হাউজে ৪০ মণ গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রণ রেখে তাতে ১০ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর হাউজ ঢেঁকে দেওয়া হয় চটের বস্তা দিয়ে। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। এভাবে প্রতি মাসে মারজাহান দম্পতির সব মিলিয়ে ৩ থেকে ৪ টন সার উৎপাদন করে থাকেন। প্রতি কেজি সারের বিক্রয়মূল্য খুচরা ১৫ টাকা। খরচ বাদে প্রতি মাসে মারজাহান দম্পতির আয় হয় প্রায় অর্ধ লাখ টাকা। এছাড়াও গোবর দিয়ে তৈরি করেছেন বায়োগ্যাস যা নিজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদের ও চাহিদা মেটাচ্ছেন বলে ও জানা যায়।

নারী উদ্যোক্তা মারজাহান জানান, স্বামীর রোজগারে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। দাগনভূঞা কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি জৈব সার তৈরি। প্রথমে একটি শেডে ১২টি পরে একটি ছাপড়া তৈরি করে সেখানে আরো ১৪টি হাউস নির্মান করি। প্রতি মাসে এখান থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ টন জৈব সার তৈরি হয়।

তিনি আরো জানান, এলাকার চাষীরা আমার কাছ থেকে সার নিয়ে চাষাবাদ করছেন। খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমার এই জৈব সার। উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও যাচ্ছে সার। আমার স্বামী আমাকে সহযোগীতা করছে। প্রায় অর্ধ লাখ টাকা মাসে আয় হচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছি। এখন অনেক নারী আমার কাছ থেকে জৈব সার তৈরি করা শিখতে আসছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি চেষ্টা করি সবচেয়ে ভালো মানের ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের। সার যত ঝরঝরে ও গন্ধমুক্ত হবে তত মান ভালো হবে। এ খামারে উৎপাদিত সারের চাহিদা অনেক বেশি। কারণ আমরা সবচেয়ে ভালোমানের সার উৎপাদন করি যা হাতের মুঠোয় চাপ দিলেই ঝরঝরে হয়ে যায়।

কৃষক আবু হোসেন জানান, বাজারে রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সারের দাম কম, তাই আমরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার শুরু করেছি। ভাল ফলও পাচ্ছি। কারণ এই সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়ছে, মাটির ক্ষতি হচ্ছে না। ফলনও ভালো পাচ্ছি।

উপজেলা উপ সহকারী কৃষি অফিসার পুলক চন্দ্র দাস বলেন, মারজাহানের আগ্রহের কারনেই আমরা তার পাশে থেকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছি। মাঝে মধ্যেই তার খামারে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসি। মারজাহানের দেখাদেখি এখন অনেকেই এই জৈব সার উৎপাদন শুরু করেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল উৎপাদনে খুবই উপযোগী একটি সার। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ সারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে উৎকৃষ্টমানের ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করতে খামারিদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আশা করি নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে আগ্রহী হবেন কৃষকরা। উপজেলার মারজাহান দম্পতি জৈব সার উৎপাদন করে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আয় করছে যা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন