ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোগীদের জিম্মি করে হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা

রোগীদের জিম্মি করে হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা

দেশের বাজারে ভারতের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে হার্টের রিং। এই পরিস্থিতিতে দর না কমিয়ে উল্টো তা বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন আমদানিকারকরা।

মূলত হার্টে রক্তনালী ব্লক হলে চিকিৎসকরা স্টেন্ট বা রিং পরানোর পরামর্শ দেন। এটি ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি, যা আসে বিদেশ থেকে। সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়। রিংয়ের মূল্য কমানোর নির্দেশ দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গেল দুই মাসে এটি আরও কমানোর নির্দেশনা আসে। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের রিংয়ের দাম সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ কমানো হয়। আর ইউরোপ থেকে আমদানি করা রিংয়ের সর্বনিম্ন ১৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা কমানোর আদেশ দেয় ওষুধ প্রশাসন।

এদিকে, ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আগে রিংয়ের দাম ৯০০ ডলার ছিল উল্লেখ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র নুরুল আলম বলেন, সেটা এখন ৫০০ ডলারে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রচুর বিশৃঙ্খলা ছিল। যে যার কাছে যেভাবে পেরেছে, দর হাঁকিয়েছে। টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। অথচ তাদের জন্য নির্দিষ্ট লাভের ব্যবস্থা করা আছে। সেখান থেকে উত্তোরণে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ক্যাশ মেমো সহকারে প্যাকেটজাত রিং বিক্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ দাম বেশি নিলে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এছাড়া অন্যান্য শাস্তির বিধানও আছে।

দেশে ইউরোপিয়ান রিং আমদানিকারক ওয়াসিম আহমেদ বলেন, ২০২১ সালে রিংয়ের দর ছিল ৭১ হাজার ২০০ টাকা। তখন ডলারের সংকট ছিল না। ২০২২ সালে সেটা সমন্বয় করা হয়। কারণ, সেসময় মার্কিন মুদ্রার সংকট শুরু হয়। ফলে মূল্য বেড়ে যায়। এসময় একেকজন একেক দাম নিতে শুরু করে। কিন্তু আমি বাড়াইনি। পরে হঠাৎ করে আমার প্রোডাক্টের মূল্য ৫৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। আসলে আমাদের জন্য এটার দাম বাড়েনি। কয়েকজন চিকিৎসক এজন্য দায়ী।

এছাড়া, প্রতিবেশী ভারতে বর্তমানে যে রিং ৫০ হাজার টাকায় মিলছে তা বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে অন্তত দেড় লাখ টাকায়। ৩ গুন বেশি নেয়ার পরও নতুন করে রিংয়ের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। দর না কমিয়ে এক পর্যায়ে আদালতেও যান ইউরোপের রিং আমদানিকারকরা। যদিও পরে আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন তারা। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, কোনো প্রস্তাব এলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর আমদানিকারকরা বলছেন, মূল্য বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। নুরুল আলম বলেন, যে আদেশ আমরা দিয়েছিলাম তা এখনও বহাল আছে। স্টেকহোল্ডাররা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, বন্ধু। তারা যদি কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসে, তাহলে আমরা সেটা একটি কমিটিতে উপস্থাপন করবো। তারা যদি মনে করে, এই বিষয়টা এভাবে করতে হবে, তাহলে সেভাবেই করবো।

আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা পর্যালোচনার কথা বলেছি উল্লেখ করে ওয়াসিম আহমেদ বলেন, এখন তারা ২ বা ৩ হাজার টাকা বাড়াবে না অন্য কিছু করবে, যেটাই করুক করতে হবে। এছাড়া আমাদের আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের বলেছি, আপনারা বাজার পর্যালোচনা করে একটা দর ধার্য করেন। এ নিয়ে নির্দেশনা দেন। তবু তারা কমাতে চাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের বাড়াতে হবে। এই দর কষাকষির কারণে ইউরোপ থেকে আমদানি করা রিংয়ের ব্যবহার আপাতত বন্ধ রয়েছে। ফলে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি রিং।

সংবাদটি শেয়ার করুন