চলমান ডলার সংকট নিরসনে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
সোমবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সিপিডি চেয়ারম্যান।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, নীতি-নির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করবে না কি ডিম কিংবা সার আমদানি করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে কমে দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে সেটা আছে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ যদি ১০ বিলিয়ন ডলারও হয়, তবে নীতি-নির্ধারকদের রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় ভালো করেছে মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমরা ভালো করছি। এর কারণ বাংলাদেশ সবসময় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে তৎপর ছিল।
প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, পাকিস্তান আমলে আমি লিখেছিলাম এক দেশ দুই অর্থনীতি। এখন দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও এর সুফল সবাই সমহারে পাচ্ছে না। এ ধরনের আয় বৈষম্য বজায় রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, হুন্ডি ও রপ্তানির মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে, নানা কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। রিজার্ভে এখনও কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে এর চেয়ে কমে গেলে কিংবা কোনো কারণে দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে রিজার্ভ নেমে গেলে বিপদ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি। সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির অবস্থান শক্তিশালী পর্যায়ে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। রেহমান সোবহান বলেন, দেশে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে, দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে, আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকার ১৫ বছর পরে এসেও কেন ভাড়ায়চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করছে, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকারকে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।