কোন ধরনের পরিশ্রম ছাড়াই ঘরে বসে বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
সপ্তাহ খানিক আগে সিষ্ট্রেম আপগ্রেটের কথা বলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন সেবা বন্ধ করে এমটিএফই।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কলিগ্রাম বঙ্গরত্ন মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ অসীম বাড়ৈ, সহকারী অধ্যাপক শ.ম নাসির হাওলাদার ও ল্যাব সহকারী প্রাণজয় বালার মাধ্যমে খুব গোপনে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ মুকসুদপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক মানুষকে ঘরে বসেই রাতারাতি কোটিপতির স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে দুবাইয়ের অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই)। মুকসুদপুরে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ভুক্তভোগীর সংখ্যা শতাধিকের উপরে।
জানা যায়, শিক্ষকতা পেশাকে হাতিয়ার বানিয়ে কলিগ্রাম বঙ্গরত্ন মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ অসীম বাড়ৈ, সহকারী অধ্যাপক শ.ম নাসির ও ল্যাব সহকারী প্রাণজয় মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা এমটিএফই ব্যবসায় বিনিয়োগ করিয়েছেন। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান থেকে তারা বুঝে নিয়েছেন লাভের বড় একটি অংশ।
এমটিএফই ব্যবসায় প্রতারিত হয়েছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমটিএফই হচ্ছে অনলাইনে বিনিয়োগের একটি প্ল্যাটফর্ম। এই চক্রটি অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে এবং শিক্ষকতার সুযোগে মানুষকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করেছিলো।
গত ৫/৭দিন আগে বিনিয়োগের লভ্যাংশের টাকা তোলার সময় হয়ে এলে দেখা যায় সিষ্ট্রেম আপগ্রেটের কাজ চলছে, এখন সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে, ট্রানজেকশন করা যাচ্ছে নাসহ নানান কথা টাকা উত্তোলনে সেবা বন্ধ করে দেয় এমটিএফই নামের প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্ত জনমনে প্রশ্ন, কিভাবে স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাব সহকারী হয়ে অসীম, নাসির ও প্রাণজয়েরা অবৈধ বিদেশি অ্যাপে মানুষকে বিনিয়োগের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিলো?
যার ফলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিদেশি অ্যাপসের ফাঁদে অনলাইনে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছে এই উপজেলার মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, দ্বিগুণ মুনাফার প্রলোভনে পড়ে আমরা অসীম স্যার, নাসির স্যার আর প্রাণজয় স্যারের কথা মতো এমটিএফই বিনিয়োগ করি। কিন্তু বিনিয়োগের পরই প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে গেছে। আমরা এখন দিশেহারা। আমরা আমাদের কষ্টে অর্জিত টাকা ও সেই সাথে শিক্ষকতার মুখোশের আড়ালে থাকা এই তিন স্যারের বিচার চাই।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ঐপ্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী রাসেল মুন্সি জানান, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। দেশে এসে মুদি মালের ব্যবসার পাশাপাশি অন্য কোনো ব্যবসা করার চিন্তা করেছিলাম। এরই মাঝে নাসির স্যার আর প্রাণজয় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগ করতে বলে। রাজি না হলে ইমোশনাল কথা বলে বিনিয়োগ করিয়ে আজ আমাকে সর্বস্বান্ত করেছে। হয়েছি ফতুর। আমার কষ্টের টাকা ফেরত চাই এবং এই মহান পেশাকে কলঙ্কিত করা তিন শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জলিরপাড়ের বনগ্রাম বাজারের ভুক্তভোগী মুদি দোকানদার সেতু সরকার বলেন, আমাদের এই বাজারের প্রায় মানুষই লেখা-পড়া জানে না। তারা শিক্ষকদের গুনী মানুষ হিসেবে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে এই ব্যবসায়ীদের পথে নামিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন পথের ফকির হয়ে গিয়েছে। আইনের আওতায় এনে এই শিক্ষকদের বিচার করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এছাড়াও অরজিৎ, বাপ্পি, কাকন সরকার, পলাশ, অনাদি বাড়ৈ, জসিমউদদীন শেখসহ শতাধিক ভুক্তভোগী তাদের বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে। সেই সাথে শিক্ষকতার আড়ালে থাকা উপাধ্যক্ষ অসীম বাড়ৈ, সহকারী শ.ম নাসির হাওলাদার ও ল্যাব সহকারী প্রাণজয় বালার বিচার চায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপাধ্যক্ষ অসীম বাড়ৈ ও সহকারী অধ্যাপক শ.ম নাসির হাওলাদার জানান, আমরা ঐ কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় মিটিং হলে দাওয়াত দিয়েছে। দাওয়াতে অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেছি। এদিকে আরেক অভিযুক্ত ল্যাব সহকারী প্রাণজয় বালার সাথে বার বার যোগাযোগ করতে কলেজে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে গোপালগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম কবির জানান, সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে গোপালগঞ্জের ঘটনাটি আমার জানা নেই। এমন ঘটনা যদি ঘটে তাহলে কোর্টের মাধ্যমে কোনো নির্দেশনা আসে তখন আইনগতভাবে তদন্তের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আনন্দবাজার/শহক