ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমেছে বাজার মূলধন

কমেছে বাজার মূলধন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৮২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মোট লেনদেনের ৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। ওই কোম্পানিগুলো লেনদেন করেছে ২ হাজার ২১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৬ হাজার টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে মূলধন পরিমাণ কমেছে। সব ধরনরে সূচক পতন হয়েছে। হাউজগুলোতে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার চাপ বেশি ছিল। ফ্লোর প্রাইজের কারণে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত হয়েছে।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপরের ৪ কার্যদিবস ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৫৬ কোটি ২ লাখ টাকায়।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১০ অক্টোবর ২৫৩ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে সিএসইতে বাজার মূলধন ৩ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৯৪ টাকায়। গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার ২০১ কোটি ৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫১ হাজার ১৩৪ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৬৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।

ডিএসইর সূত্রমতে, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৮২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪টির, দর কমেছে ১২৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৩টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১২টি কোম্পানির শেয়ার।

সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৫৬ দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৫৩ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১৭ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৬ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ২৩৫ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৮৫ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্টে। এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এছাড়া বি ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ এবং এন ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৩৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। একাই মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ লেনদেন করেছে।

শেয়ার দর বেড়েছে ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা (এ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার (এ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, নাভানা ফার্মা (এন ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিং (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ, বেক্সিমকো (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, লুব-রেফ (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ১৬ শতাংশ, আইটি কনসালটেন্টস (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট (এ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৮০ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার।

যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন