ঢাকা | শুক্রবার
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টপটেনের দখলে ৪০ ভাগ লেনদেন

টপটেনের দখলে ৪০ ভাগ লেনদেন

বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত

পুঁজিবাজার

  • কমেছে লেনদেন, বেড়েছে সূচক
  • মূলধন বেড়েছে ১৭৬২ কোটি টাকা
  • লেনদেন সেরা ওরিয়ন ফার্মা
  • পিই রেশিও ১৪.৯৮ পয়েন্ট

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় কমেছে। তবে উত্থান হয়েছে সব ধরণের সূচকের। বেড়েছে মূলধন পরিমাণ। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত হয়েছে। হাউজগুলোতে ক্রয়ের চাপ কিছুটা বেশি ছিল। মোট লেনদেনের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। কোম্পানিগুলো লেনদেন করে ২ হাজার ৯২ কোটি ২৪ লাখ ৬ হাজার টাকা।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটসহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। এর কারণে বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন গত ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার ছোট হয়ে আসে। অবশ্য পরের সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরে এসেছিল। এরপর উত্থান-পতনের মধ্যে কাঁটে পুঁজিবাজার। এরই ধারায় গেল সপ্তাহে লেনদেন মন্দায় কেটেছে। তবে সূচক সহ মূলধন বেড়েছে।

ডিএসইর সূত্রমতে, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ২৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ৩০৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গড় লেনদেন কমেছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০১টির, দর কমেছে ৯৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯২টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৯টি কোম্পানির শেয়ার।

আরও জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৯ হাজার ৯১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহ বা গত ২৯ সেপ্টেম্বর মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৯ হাজার ৯১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৭৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়।

এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫৬৯ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৩১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ৩৬১ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে।

এদিকে “গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৭ শতাংশ।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ থেকে বাড়লেও পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৬০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। ‘এন’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ এবং বি ক্যাটাগরি ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ লেনদেন করেছে।

এছাড়া বেক্সিমকো (এ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিং (এ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, জেএমআই হসপিটাল (এন ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, বিবিএস কেবলস (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকস (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৩১ শতাংশ, কপারটেক (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সোনালি পেপার (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার।

যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন