- দুই স্টকের প্রধন সূচক পতন
- লেনদেন সেরা বেক্সিমকো
- শেয়ার বিক্রেতরা চাপ বেশি
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল রবিবার প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স ও সিএএসপিআই) পতন হয়েছে। কমেছে দুই স্টকের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। বিক্রয়ের চাপে এদিন ডিএসইর লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এটি চলতি বছরে মধ্য লেনদেনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।
সরকারের নতুন সময় সূচির প্রথম কার্যদিবস গত ২৪ আগস্ট (বুধবার) পতন হয়েছিল। যা আগের টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর এই মন্দা। পতন পরের গত দুই কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার ও রবিবার) ধরে উত্থানে রয়েছিল পুঁজিবাজার। এসময় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো। পরেরদিন সোমবার লেনদেনে কিছুটা ভাটা পড়ে। সেই অবস্থান থেকে পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন বাড়ে। এর মধ্যে গত বুধবার লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। সেখান থেকে কমে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন ১৯শ কোটি টাকায় অবস্থান করে। এরপর গতকাল রবিবার লেনদেন ২৩শ কোটিতে চলে এসেছে। এদিন শেয়ারে ক্রেতার চাপ কম ছিল। অপরদিকে বিক্রয়ের চাপে হিড়িক। বিক্রয়ের চাপে লেনদেন বাড়লেও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। টানা ছয় কর্মদিবস উত্থানের পর গতকাল পুঁজিবাজারে সূচক পতন হয়েছে। সূচকের এ ধরনের পতন মূল্য সংশোধন বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, উত্থানের পর শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছে আনেক বিনিয়োগকারী। এক সাথে অনেকে শেয়ার বিক্রি করায় লেনদেন পরিমান বাড়ে। অপরদিকে সূচক সহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এ ধরনের পতন হওয়াটা স্বাভাবিক। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছিল। ওইদিন রবিবারের মতো পরেরদিন পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। এরপরের তিন কার্যদিবস (মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার) উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল। উত্থান কারণে স্বস্তিতে ছিলো বিনিয়োগকারীরা। সেই স্বস্তি পরের চার কার্যদিবসের মন্দায় পুঁজিবাজারের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। টানা পতনে ক্রেতার সংখ্যা বহুগুণে হারায়। এরপর গত ছয় কার্যদিবস উত্থানে ফিরে আসলো। উত্থানের পর গত বুধবার পতনে ফিরেছিল পুঁজিবাজার। ওই পতন পরের ছয় কার্যদিবস উত্থানে ফিরেছিল পুঁজিবাজার। সেখান থেকে গতকাল রবিবার ফের ভাটায় চলে আসলো পুঁজিবাজার। এই ভাটা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।
জানা যায়, গতকাল রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এদিন ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। এছাড়া ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১০ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৯৫টি এবং কমেছে ২১৭টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ৬৩টির। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ১১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ন্যাশনাল পলিমার ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ইউনিক হোটেল ৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ৫১ কোটি ১০ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন ৪৬ কোটি ৬ ৯২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৩৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং জেনেক্স ইনফোসিস ৩৯ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপরদিকে সিএসইতে গতকাল রবিবার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৭৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮১ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৩৯ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স সূচক ৪৪ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৭৯ দশমিক ৪০ পয়েন্ট, ১৩ হাজার ৮০৭ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে এবং ১১ হাজার ৪৩৬ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসআই সূচক দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৯ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৯৩টি, কমেছে ১৬৬টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৪২টির।
আনন্দবাজার/শহক