জুনে ব্যয় করতে হবে ৭৬১৪৩ কোটি
- মে মাসে ব্যয় ২২২০২ কোটি টাকা
- ১১ মাসে বাস্তবায়ন ৬৫ শতাংশ
বছরের পর বছর একই সমস্যা দেখছি
–প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আগের বছরের তুলনায় কিছুটা গতি পেয়েছে চলমান অর্থবছরের গত ১১ মাসে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৬৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এটি গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক শূন্য ৫৮ শতাংশ বেশি। গতবছর একই সময়ে এডিবি বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৮ দশিমক ৩৬ শতাংশ। যেখানে শুধু মে মাসে অগ্রগতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
যেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরের মে মাসে এডিবি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ গতবছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ বাস্তবায়ন বেড়েছে। গত তিন অর্থবছরের তুলনায় ১১ মাসে এবারের এডিবি বাস্তবায়ন হার সর্বোচ্চ। গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এগার মাসে এডিবি বাস্তবায়ন সর্বোচ্চ ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল। সে বছরও এবারের মতো বিদেশি ব্যয় ৭০ শতাংশের বেশি ছিল। করোনার সময়ে বিদেশি অর্থায়নের ব্যয় হ্রাস পেয়ে ২০১৯-২৯ অর্থবছরে ৫৫ শতাংশে নেমে গেলেও এবার তা আবার ৭০ শতাংশে ওঠে গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বছর সংশোধিত দুই লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এডিবি বরাদ্দের মধ্যে ১১ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এ হিসাবে এ অর্থ বছরের বাকি এক মাস বা জুন মাসে নির্ধারিত এডিবি বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে ব্যয় করতে হবে বাকি ৭৬ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। যেখানে সরকার গত মে মাসে ব্যয় করেছিল মাত্র ২২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত মাসের তুলনায় জুন মাসে ব্যয় করতে হবে সাড়ে ৩ গুণের বেশি।
অর্থ বছরের শেষ মাসে এসে এ অতিরিক্ত ব্যয় কতটা সম্ভব বা যৌক্তিক এমন প্রশ্ন করা হয় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। জবাবে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, শেষ সময়ে তাড়াহুড়োর মধ্যে ব্যয় করার একটা চাপ পড়ে। ফলে কাজের গুণগত মান অনেক সময় ক্ষুণ্ন হয়। বছরের পর বছর আমরা একই সমস্যা দেখছি। এটার ফলে অনেক সময় এডিপি সংশোধন করা হয় এবং সংশোধিত এডিবিও পুরোপুরি ব্যয় করা যায় না। অনেক আগে থেকেই এটা নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা। সেসব পদক্ষেপ নিতে পারলে আমাদের এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতাও বাড়বে। তাছাড়া করের টাকার টাকার সৎ ব্যবহার হবে। গুণমান নিশ্চিত করে কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করা যায় সেটার দিকে নজর দেয়ার তাগিদ দেন তিনি। তাছাড়া শুধুমাত্র টাকা খরচ নয়, এটা যেন মানসম্মতভাবে খরচ হয় সেটার নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।
চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি গ্রহণ করে। পরে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অবশ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার এডিপি চলমান রয়েছে।
আইএমইডির সূত্র অনুযায়ী, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের তুলনায় বৈদেশিক সহায়তা বা প্রকল্প সহায়তার অর্থ ব্যয়ের হার বেশি। মে মাস পর্যন্ত সময়ে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৬১ শতাংশ এবং বৈদেশিক অর্থায়ন থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ব্যয় হয়েছে ৭৩ শতাংশ।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে থোক বরাদ্দসহ মোট ১৮২৮টি প্রকল্প এডিপির তালিকাভূক্ত রয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১৫৬৮টি। আর কারিগরি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে ১৪৩টি।
আনন্দবাজার/শহক