পুঁজিবাজারে লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী–
- ডিএসইতে ১২৫৮ কোটিতে, পতন সূচক
- টেলিকমে শতভাগ দর পতন, পাটে উত্থান
পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস পতন হলেও পরের তিন কার্যদিবস লেনদেন জোয়ার হিসেবে কাটলো পুঁজিবাজার। ঈদের পর চতুর্থ কার্যদিবস বা গতকাল মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন সাড়ে ১২শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করে। যা গত তিন মাস বা ৫৫ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ এই লেনদেন। লেনদেন পরিমাণ বাড়লেও এদিন সব ধরনের সূচক পতন হয়েছে। এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।
রেগুলেটরদের (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি ) নানান উন্নয়নের পরও দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার পতন কবলে। সেই পতন রোজার মাসে আরো বেড়েছে। রোজার পতনে অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নীরবে কেঁদেছে। ঠিক মতো ঈদ করতেও পারেননি। অনেকে পুঁজি হারিয়ে পরিবার থেকে রয়েছেন দূরে। স্বজনদের জামা কাপড় দিতে না পারায় অনেক বিনিয়োগকারী রাজধানীতে থেকে একাই ঈদ করেছেন বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দায় পুঁজি হারায় প্রায় ৯০ ভাগ বিনিয়োগকারী। নানা সময় বিভিন্ন মহলের চেষ্টায় দীর্ঘদিন পর ঈদের আগে মাত্র কয়েকদিন পুঁজিবাজার উত্থানে ছিল। মানে লেনদেন, শেয়ার দর সহ সূচক চাঙ্গা ছিল। চাঙ্গার কারণে শেয়ার লসে বিক্রয় করা থেকে বিরত ছিলেন অনেকেই। এ কারণে পুঁজিবাজারে ক্রয় চাপ বেড়েছে। বিক্রয়ের চাপ কমেছে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এ ধরনের বৃদ্ধিতে পুঁজি হারানোর পথে পড়েছে বাধা। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার তার উল্টো গতি ছিল পুঁজিবাজার। এদিন লেনদেন পরিমান বেড়েছে। তবে পতন হয় সূচক। কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। পতন কারণে এদিন পুঁজিবাজারে শেয়ারের বিক্রয় চাপ বাড়ে। কমে ক্রয়ের চাপ।
পুঁজিবাজারে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন ৩৭ দশমিক ১৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সিএসইর ৪০ দশমিক ১২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। এদিন পুঁজিবাজারে ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৫৩ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং সিএসইর ৫০ দশমিক ১৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এই ধরনের বাড়া স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিন পুঁজিবাজার ডিএসইতে টেলিকম খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন ইঞ্জিনিয়ারিং, বস্ত্র, ওযুধ রসায়ন, খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানি শক্তি, আইটি, বিবিধ, পেপার, সেবা আবাসন সিমেন্ট এবং সিরামিক খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন পাট খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এদিন এদিন বিমা খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এদিন ব্যাংক, নন ব্যাংকিং আর্থিক, ফান্ড, চামড়া এবং ভ্রমন অবসর খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে উত্থান পতন ছিলো ছন্দ। অধিকাংশ খাতের কমার একই চিত্র ছিল অপর পুঁজিবাজার সিএসইতেও। দুই স্টকের এ ধরনের শেয়ারের দর বৃদ্ধি-হ্রাসকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার শেয়ার। এ লেনদেন গত তিন মাস বা ৫৫ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি এদিনের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার। গত সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ২০৫টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৪৫টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩২ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৫ দশমিক ৬১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১৩ দশমিক ৬২ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪৩৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৪৮ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে।
এদিনে ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকো ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন জেএমআই হসপিটাল ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকস ৩৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ৩৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ইউনিক হোটেল ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ২৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও জিএসপি ফাইন্যান্স। ২০ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
এদিন ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ওঠেছে এসিআই ফর্মূলেশন শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। এদিন ডিএসইতে শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বঙ্গজ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ন্যাশনাল ফীডস ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, ঢাকা ডাইয়িং ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, এনভয় টেক্সটাইল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আইএফআইএল ইসলামি ১ম ফান্ড ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্স ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
এদিন ডিএসইতে দর কমার শীর্ষে ওঠেছে ইমাম বাটনের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে শতাংশ। এদিন ডিএসইতে শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাভার রিফ্রেক্টরীজ ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, জেএমআই হসপিটাল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মনোস্পুল পেপার ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পেনিনসুলা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমার ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ, দুলামিয়া কটন ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সোনালি পেপার ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, এডভেন্ট ফার্মা ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৪ দশমিক ১২ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১২৪টির, কমেছে ১৫৫টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩০টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০৭ দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫৩১ দশমিক ৯০ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৯ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৯৩ দশমিক ২৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৪ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৩৮ দশমিক ২২ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৩৫ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭১৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৩১ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে এসিআই ফর্মূলেশন ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্স ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকস ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ১ কোটি ২ লাখ টাকা, কেয়া কসমেটিকস ৯৮ লাখ টাকা, এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংক ৯৩ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৮৯ লাখ টাকা এবং জিএসপি ফাইন্যান্স ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।