ঈদের পর দ্বিতীয় কার্যদিবস বা গতকাল রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘরের কাছাকাছিতে অবস্থান করেছে। আগের কার্যদিবস থেকে এদিন লেনদেন বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। লেনদেন বেড়ে দ্বিগুনের একই অবস্থা অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। এদিন বেড়েছে দুই স্টকের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। উভয় স্টকে বেড়েছে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ও সিএএসপিআই।
রেগুলেটরদের নানান উন্নয়নের পরও দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার পতন কবলে। সেই পতন রাস্তায় রোজার মাসে চলমান ছিল। শুধু রোজার মাসেই পতনে প্রায় ১৭ শতাংশ পুঁজি হারিয়েছে অনেক বিনিয়োগকারী। বিভিন্ন মহলের চেষ্টায় দীর্ঘদিন পর ঈদের আগে কয়েকদিন পুঁজিবাজার উত্থানে ছিল। মানে লেনদেন, শেয়ার দরসহ সূচক চাঙ্গা ছিল। চাঙ্গার কারনে শেয়ার লসে বিক্রয় করা থেকে বিরত ছিলেন অনেকেই। এই কারণে ক্রয় চাপ বেড়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছিল। লেনদেন বৃদ্ধিতে পুঁজি হারানোর পথে মুখে পড়েছে বাধা। পুঁজিবাজার উত্থান কারণে বিনিয়োগকরাীরা সাময়িক স্বস্তিতে ঈদ করেছে। সেই স্বস্তি পুঁজিবাজারে বিদ্যমান চান বিনিয়োগকারীরা এমনটিই বলছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হবার পরামর্শ দেন। করোনা মহামারি আমাদের অনেক কাঁদালো জানিয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী মোশারফ ভূইয়া বলেন, বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় গত বছরের এপ্রিল থেকেই ডিএসই লেনদেন চমক দেখায়। কিন্তু এটি ধরে রাখতে পারেনি।
গত বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে লেনদেন হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছিল জানিয়ে মোশারফ ভূইয়া বলেন, সেই লেনদেন পরে আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছিল। লেনদেনের উত্থান চলতি বছরেও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই মন্দার কবলে পড়ে ডিএসই। ঈদের আগের মন্দায় বা রোজার এক মাসে মাসে প্রায় ১৬ শতাংশ পুঁজি হারিয়ে বসে আছি। এখন আর পুঁজি হারাতে চাই না।
পুঁজিবাজারে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন ৫৮ দশমিক ২৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং সিএসইর ৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। এদিন পুঁজিবাজারে ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং সিএসইর ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এই ধরনের বাড়া স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিন পুঁজিবাজার ডিএসইতে সেবা আবাসন খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এদিন বস্ত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং, ওযুধ রসায়ন, খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানি শক্তি, আইটি, পাট, পেপার, বিবিধ এবং সিরামিক খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এদিন ব্যাংক, বিমা এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন নন ব্যাংক আর্থিক, ফান্ড, চামড়া, ভ্রমণ অবসর এবং সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে উত্থান পতন ছিলো ছন্দ। অধিকাংশ খাতের বৃদ্ধির একই চিত্র ছিল অপর পুঁজিবাজার সিএসইতেও। দুই স্টকের এ ধরনের শেয়ারের দর বৃদ্ধি-হ্রাসকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে ঈদের পর দ্বিতীয় কার্যদিবস বা গতকাল রবিবার লেনদেন হয়েছে ৯৭২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ঈদের পরের কার্যদিবস বা গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২১৬টির, কমেছে ১১২টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৫২টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৯ দশমিক ৪১ পয়েন্টে। ডিএসইএস সূচক ৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৭ দশমিক ৪১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪৯ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।
এদিনে ডিএসইতে জেএমআই হসপিটালের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। অপরদিকে সিএসইতেও জেএমআই হসপিটালের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। দুই স্টকে লেনদেন শীর্ষে জেএমআই হসপিটালের শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে জেএমআই হসপিটাল ৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। আর সিএসইতে জেএমআই হসপিটাল ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ৩৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ইউনিক হোটেল ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, ইফাদ অটোস ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ারটেক ১৯ কোটি ৪ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং ডরিন পাওয়ার ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
এদিন ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ওঠেছে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এদিন ডিএসইতে শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে পেনিনসুলা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এএফসি এগ্রো ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, একটিভ ফাইন ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, শাশা ডেনিমস ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিং ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, জিবিবি পাওয়ার ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ ও ইফাদ অটোস ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
এদিন ডিএসইতে দর কমার শীর্ষে ওঠেছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এদিন ডিএসইতে শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইমাম বাটন ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্রগতী ইন্স্যুরেন্স ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, বিডি ওয়েল্ডিং ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ, ইউনিক হোটেল ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, জেমিনী সী ফুড ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ২ দশমিক ৭০ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ঈদের পরের কার্যদিবস বা গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৭২টির, কমেছে ৯১টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৫টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০৫ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৬৩ দশমিক ১৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১২ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৪৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭৫৭ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭২ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে জেএমআই হসপিটাল ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাইফ পাওয়ারটেক ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ১ কোটি ১ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৮৩ লাখ টাকা, কেয়া কসমেটিকস ৮১ লাখ টাকা, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স ৭৯ লাখ টাকা, ইফাদ অটোস ৭৪ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৭১ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকস ৬৯ লাখ টাকা এবং পেনিনসুলা ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
আনন্দবাজার/শহক