ঢাকা | মঙ্গলবার
১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্দায় ডুবলো পুঁজিবাজার

মন্দায় ডুবলো পুঁজিবাজার

লেনদেন মন্দার কবলে তলিয়ে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। এদিন ডিএসইর লেনদেন পরিমাণ কমে ৫ শত কোটি টাকা ঘরে আসে। যা গত ১১ মাস ২২ দিন বা ২৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে সবনিম্ন লেনদেন। এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন পরিমাণ কমে ১২ কোটি টাকা ঘরে আসে। এদিন ৭১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরে পতন হয়েছে। এদিন দুই স্টকে কমেছে সব ধরনের সূচক।

দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রমতে, এদিন ডিএসইর লেনদেন পরিমাণ কমে ৫ শত কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। যদিও আগের কার্যদিবস সোমবারের লেনদেন ছিল ৬ শত কোটি টাকার ঘরে। গত রবিবারের লেনদেন ছিল ৮ শত কোটি টাকার ঘরে। গত বৃহস্পতিবারের লেনদেন ছিল এগারো শত কোটি টাকার ঘরে। অপরদিকে, সিএসইর লেনদেন পরিমাণ কমে ১২ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। যদিও আগের কার্যদিবস সোমবারের লেনদেন ছিল ১৪ কোটি টাকার ঘরে। গত রবিবারের লেনদেন ছিল ১৮ কোটি টাকার ঘরে। গত বৃহস্পতিবারের লেনদেন ছিল ৬১ কোটি টাকার ঘরে।

হঠাৎ করেই চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজার কোটি টাকায় লেনদেন ওঠলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। পরের কার্যদিবস থেকে ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল। লেনদেন কমে ৬ শত কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ মার্চ হাজার কোটি টাকা ঘরে চলে এসেছিল। এরপরের দিন লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে এসেছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৫ মার্চ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন ফিরে। পরের দিনে সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। ফের লেনদেন ৮ শত কোটি টাকার ঘরে অবস্থান ছিল।

এরপর দুই কার্যদিবস (সোমবার ও মঙ্গলবার) লেনদেন ৯ শত কোটি টাকার ঘরে এসেছিল। সেই লেনদেন বুধবার ৮শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান চলে এসেছিল। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন এগারশত কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। গত রবিবার কমে লেনদেন ৮শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। গত সোমবার আরো কমে লেনদেন ৬শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখান থেকে মঙ্গলবার লেনদেন আরো কমে ৫শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। লেনদেন কমার একই চিত্র সিএসইতে রয়েছে। লেনদেন এধরনের কমাকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এসএমই মার্কেটের ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বেড়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এক দিনের ব্যবধানে ২৪৩ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে মঙ্গলবার এসএমই সূচক দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৭৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। এ লেনদেন এসএমই মার্কেটের সব্বোর্চ্চ লেনদেন। এদিন উত্থানের কারণে শেয়ার বিক্রেতাই ছিল না।

এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন সহজতর করতে বিনিয়োগকারীদের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন জটিলতা সমাধান করার ঘোষণা দেয় ২৮ মার্চ। ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার ঘোষণার পরের তিন কার্যদিবস এসএমই মার্কেট প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ছে। ঘোষণার কারণে গত ২৯ মার্চ দশটির মধ্যে আট প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ে। গত বুধবার আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ে। গত বৃহস্পতিবারে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ে। কিন্তু রবিবার সেই লেনদেন বৃদ্ধির ছন্দ পতন হয়। গত রবিবার ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমে। পরেরদিন কিছুটা কালেকশন করে হয়। ফলে উত্থান দিকে ঘুরে দাঁড়ায় এসএমই মার্কেট। গত সোমবার নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ে। মঙ্গলবারও শেয়ার দর বেড়েছে। এদিনও নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ে।

এছাড়া গত ২৮ মার্চ এসএমই মার্কেটের সূচক বেড়েছিল ১০ শতাংশ। লেনদেন হয়েছিল ৫ কোটি ২০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। গত বুধবার সূচক বেড়েছিল ৭ শতাংশ। লেনদেন হয়েছিল ৬ কোটি ৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার সূচক বেড়েছে ১৯ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। গত রবিবার সূচক কমেছে দশমিক ১৭ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। গত সোমবার সূচক বেড়েছে ১৭ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। গতকাল মঙ্গলবার সূচক বেড়েছে ১৮ শতাংশ। আগের দিনের ১ হাজার ১২৯ দশমিক ৯৯ পয়েন্টের সূচক এদিন ১ হাজার ৫৭৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে উঠে আসে। এসএমই মার্কেটের লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

এদিন এসএমই মার্কেটের বেঙ্গল বিস্কুটের ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ দর বেড়েছে। এছাড়া ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, নিয়ালকো অ্যালয়েজের ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, এপেক্স ওয়েভিংয়ের ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, মোস্তফা মেটালের ৪ শতাংশ, ওরিজা অ্যাগ্রোর ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোর ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, কৃষিবিদ ফিডের ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং মামুন অ্যাগ্রোর ৩ দশমিক ২০ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে। বাকি হিমাদ্রির বিক্রেতা না থাকায় দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

দুই স্টকে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন (মঙ্গলবার) ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সিএসইর ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। এদিন পুঁজিবাজারে ৭১ দশমিক ৫১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৭৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং সিএসইর ৬৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়েছে।

এদিন ডিএসইতে সিরামিক ও পাট খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এদিন সিমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, নন ব্যাংক আর্থিক, খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানি শক্তি, বিমা, আইটি, বিবিধ, ফান্ড, ওযুধ রসায়ন, চামড়া, এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ কোম্পিানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। অপরদিকে এদিন ব্যাংক, পেপার, সেবা আবাসন, ভ্রমন অবসর এবং বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার উত্থান-পতন মিশ্রাবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরের এ ধরনের কমাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৫৭৫কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার। এ ধরনের লেনদেন ১১ মাস ২২ দিন বা ২৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল ৫৫৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৮১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ২৮৬টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৪৪টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৯৪ দশমিক ৩০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪৬৪ দশমিক ৬২ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৬০ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকো ৪৮ কোটি ৫৮ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৩২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, আইপিডিসি ৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ভিএফএস থ্রেড ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা, বিকন ফার্মা ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা, ইয়াকিন পলিমার ১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, এডিএন টেলিকম ১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, জেমিনি সী ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং রংপুর রংপুর ফাউন্ড্রি ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

অপরদিকে সিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর আগের কার্যদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৪টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ১৯৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩০টির।

এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে। সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৩২ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৬২ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭৮৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৪২ দশমিক ৪২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে লার্ফাজ-হোল্ডসিম শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে সিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন সিএসইতে লার্ফাজ-হোল্ডসিমের ৭৩ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক ৫৬ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ৫১ লাখ টাকা, বিডি কম ৪৮ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ৩৮ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার ৩৩ লাখ টাকা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ৩২ লাখ টাকা, আইপিডিসি ২৭ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ২৬ লাখ টাকা এবং রবি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন