- হাজার থেকে নামলো ৮শ’ কোটিতে
- লেনদেন সেরা বেক্সিমকো
- সামান্য উত্থান ডিএসইএক্স
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) হাজার কোটি টাকার লেনদেন ধরে রাখতে পারলো না। ফলে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর থেকে ছিটকে ফের গতকাল বুধবার ৮শ’ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সামান্য বেড়েছে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
হঠাৎ করেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজার কোটি টাকায় লেনদেন ওঠলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। পরের কার্যদিবস থেকে ফের হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল। লেনদেন কমে ৬’শত কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। সেখানে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার হাজার কোটি টাকা ঘরে চলে এসেছিল।
এরপরের দুই লেনদেন ফের হাজার কোটি টাকার নিচে অবস্থান নেয়। সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গত মঙ্গলবার হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন চলে এসেছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার আবারো সেই লেনদেন ৮’শত কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। লেনদেন কমে গিয়ে ফের বৃদ্ধি পাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।
এদিন ডিএসইতে ব্যাংক ও সেবা আবাসন খাতের অধিকাংশ কোম্পিানির শেয়ার দর বেড়েছে। অপরদিকে এদিন সিমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, নন ব্যাংকিং আর্থিক, খাদ্য আনুষঙ্গিক, জ্বালানী শক্তি, বিমা, আইটি, পাট, পেপার এবং টেলিকম খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমেছে। এদিন অন্য খাতের উত্থান পতনের কিছুটা ছন্দ ছিল। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের বাড়া-কমাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইতে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ২২৮টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৩টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৬৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইএস সূচক দশমিক ৪৮ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৩১ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ৪৫৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে এদিন (বুধবার) লেনদেন হয়েছে ৮৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস গত মঙ্গলবার ১ হাজার ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৯৮৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, রবিবার ৯৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা, বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৭৭৩ কোটি ১ লাখ, মঙ্গলবার ৭৪৬ কোটি ৯ লাখ, সোমবার ৭৪০ কোটি ২৬ লাখ, রবিবার ৬৫১ কোটি ৫৬ লাখ, আগের সপ্তাহ বৃহস্পতিবার ৬৪৪ কোটি ৫৫ লাখ, বুধবার ৬৫৬ কোটি ৬ লাখ, মঙ্গলবার ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ, সোমবার ৭৩০ কোটি ১ লাখ এবং রবিবার ৯১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। এরও আগের সপ্তাহ বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৫০ কোটি ২৮ লাখ, বুধবার ৮৮৭ কোটি ৮৫ লাখ, মঙ্গলবার ৯০৮ কোটি ৮২ লাখ এবং রবিবার ১ হাজার ১৪০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে বেক্সিমকো শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকো ৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিডি কম ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, আমরা টেকনোলজি ২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, জিবিবি পাওয়ার ১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংক ১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, আমরা নেট ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা, অগ্নি সিস্টেমস ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং মাকের্ন্টাইল ব্যাংক ১৩ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
এদিন ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ওঠে এসেছে জেমিনি সী ফুডের শেয়ার দর। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। এরপর সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এপেক্স ফুডস ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ, ঢাকা ডাইং ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, আমরা টেকনোলজি ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ, সিলকো ফার্মা ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, নাহি এ্যালুমুনিয়াম ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংক ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
অপরদিক এদিন ডিএসইতে দর কমার শীর্ষে ওঠে এসেছে রবি শেয়ার দর। এদিন শেয়ারটির দর কমেছে ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরপর বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২ শতাংশ, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক ২ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, বিডি থাই ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, এডভেন্ট ফার্মা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, মতিন স্পিনিং ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল বুধবার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ২৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৮২টির, কমেছে ১৯২টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৭টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮২১ দশমিক ১৯ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক ৩ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৮৯০ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৩৫ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ২ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৬১ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে এবং ১৪ হাজার ১০৬ দশমিক ১৭ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে সিএসইতে কোম্পানিটি শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন সিএসইতে বেক্সিমকো ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রবি ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ১ কোটি ১১ লাখ টাকা, কেয়া কসমেটিকস ৮০ লাখ টাকা, মাকের্ন্টাইল ব্যাংক ৭৪ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৬৯ লাখ টাকা, এনআরবিসি ব্যাংক ৬৯ লাখ টাকা, উত্তরা ব্যাংক ৬৮ লাখ টাকা, বিডি কম ৪৮ লাখ টাকা এবং ওয়ান ব্যাংক ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
দুই স্টকে (ডিএসই ও সিএসই) এদিন ৬১ দশমিক ৮৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৬০ শতাংশ এবং সিএসইর ৬৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারে ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং সিএসইর ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়।
আনন্দবাজার/শহক