ঢাকা | রবিবার
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাদে নামতে গিয়েও ঊর্ধ্বমুখী

খাদে নামতে গিয়েও ঊর্ধ্বমুখী

পুঁজিবাজারে যুদ্ধের বাতাস—

  • দুই মাসে সবনিম্ন লেনদেন
  • ৭৬ ভাগ কোম্পানির দর উত্থান, পতন ২২
  • সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো, সিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংক

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন উভয় স্টকের ৭৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। তবে আগের কার্যদিবস থেকে এদিন দুই স্টকের লেনদেন পরিমাণ কমেছে। ডিএসইর লেনদেন কমে এদিন সাতশত কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। যা গত ৪৮ কার্যদিবসের মধ্যে সবনিম্ন লেনদেন হিসেবে গণ্য হয়েছে। গতকাল সোমবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারের মতোই লেনদেন ও সূচকে ধস নামে বাংলাদেশে। কয়েকদিন ধরেই পুজিবাজারে দর সূচকে উত্থান-পতন ঘটছিল, যাকে যুদ্ধের প্রভাব হিসেবেই দেখছিলেন অনেকে। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ যুদ্ধের (রাশিয়া ও ইউক্রেন) কারণে দেশের পুঁজিবাজারের সূচক পতন অযৌক্তিক বলে দাবি করছেন।

ডিএসইতে সোমবার লেনদেন হয়েছে ৭৩০ কোটি ১ লাখ টাকা। গত দুই মাস ৫ দিন বা ৪৮ কার্যদিবসের মধ্যে সবনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৬৫০ কোটি ১ লাখ টাকা। গত রবিবার লেনদেন হয়েছিল ৯১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সোমবার সিএসইতেও কমেছে লেনদেন পরিমান। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের দিন রবিবার লেনদেন হয়েছিল ৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজারে (দুই স্টক) এদিন ৭৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৮৩ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং সিএসইর ৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং সিএসইর ২২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। গত দুই কার্যদিবস পতনের পর সোমবার কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এ ধরনের বাড়াকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা বলে জানায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিন নন-ব্যাংক আর্থিক, চামড়া, পেপার এবং পাট খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এদিন ব্যাংক, ওষুধ রসায়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিমা, জ্বালালি শক্তি, খাদ্য আনুষঙ্গিক, বিবিধ, বস্ত্র, সিরামিক, সিমেন্ট, আইটি, টেলিকম এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এদিন ব্যাংক খাতের ৯৪ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন খাতের ৮৪ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ৯৩ শতাংশ, বিমা খাতের ৯২ শতাংশ, জ্বালালি শক্তি খাতের ৯১ শতাংশ, খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের ৯০ শতাংশ, বিবিধ খাতের ৮৬ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ৮৪ শতাংশ, সিরামিক খাতের ৮০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের ৭৭ শতাংশ, আইটি খাতের ৭৩ শতাংশ, টেলিকম খাতের ৬৭ শতাংশ এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ৫১ শতাংশ দর উত্থান হয়েছে। এদিন ভ্রমণ অবসর খাতের ৭৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। পুঁজিবাজারের কোম্পানিরগুলোর শেয়ার দরে এ ধরনের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। অপরদিকে সিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে ডিএসইতে বেক্সিমকো এবং সিএসইতে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার স্থান পেয়েছে। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকো ৫৫ কোটি ৫৪ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৪৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং সোনালী পেপার ১৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়া এদিন সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, কেয়া কসমেটিকস ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ৯১ লাখ টাকা এবং বিডি থাই ফুড ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৭৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৩১৪টির, কমেছে ৩৬টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৭টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৩ দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৩৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪৮২ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৫৩ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে। অপরদিকে সিএসইতে এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২১০টির, কমেছে ৬৭টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৮টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৪০ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।

এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১১৫ দশমিক ২১ শতাংশ, সিএসসিএক্স সূচক ৭৯ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫৩ দশমিক ৪০ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৯৬০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭৮৮ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২২৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে।

সংবাদটি শেয়ার করুন