ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে কৃষি জমিতে পোকা দমনে আলোক ফাঁদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা স্বল্প খরচে, কোনরকম কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া,কম পরিশ্রমে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমনে করছেন। দন দিন আলোক ফাঁদ পদ্ধতি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বেশ সারা ফেলিয়েছে। আলোক ফাঁদ ব্যবহারে ক্ষতিকর শত্রু পোকা ও উপকারী বন্ধু পোকাও নির্ণয় করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা পোকামাকড়ের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় আলোক ফাঁদ ব্যবহারে কৃষকদেরকে নিয়মিত উৎসাহিত করছে ।
কৃষি নির্ভর এ উপজেলায় প্রতি বছর কৃষকরা ধান, গম, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে আসছেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় পোকার আক্রমনে প্রতি বছরই তাদের কমবেশী ফসলের ক্ষতি হয়ে উৎপাদন অনেক কমে যাচ্ছে। ফলে পোকা দমনের জন্য বাড়তি খরচ করে ক্ষেতে না বুঝে নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ কয়েকগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষযটি বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিতে বসানো হয়েছে আলোর ফাঁদ। এতে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা চিহ্নিত করে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কৃষকরা শুধু প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করছেন ওই ফসলে। এতে করে জমিতে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে পৌরশহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ উপজেলায় ১৬টি বøক রয়েছে। ওইসব বøকে চলছে আলোক ফাঁদ পদ্ধতিতে পোকা দমন।
এদিকে পৌর শহরের তারাগন, নারায়নপুর, উপজেলার নুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আলোক ফাঁদ প্রদর্শনী করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সন্ধ্যার সময় ধান ক্ষেতের ১০-১৫ মিটার দূরে পতিত জায়গায় আলোক ফাঁদ বসানো হয়। চার্জ লাইটের সাহয্যে খুঁটিতে পুঁতে নিচে সাবান মিশ্রিত পানির গামলা দিয়ে এই ফাঁদ স্থাপন করা হয়। এতে অপকারী পোকাগুলো আলোতে আকর্ষিত হয়। যার ফলে পোকাগুলো সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে মারা যায়। ফসলে কি কি অপকারী পোকা রয়েছে তা শনাক্ত করা যায়। ফাঁদের মাধ্যমে সবুজ পাতা, ফড়িং, মাঝরা মথ, পাতা মোড়ানো পোকার মথ দেখা যায়।
স্থানীয় কৃষক মো. হানিফ মিয়া জানান, আলোর ফাঁদ ব্যবহারে ফসলি জমিতে পোকার ধরণ চিহ্নিত করা হচ্ছে। পুরো ক্ষেত আক্রমণ করার আগেই নির্দিষ্ট কীটনাশক প্রয়োগ করেই ফসলের পোকা দমন করা যাচ্ছে।
আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা নিধনে কোনো খরচ নেই ফসলি জমিরও কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না। ফলে জমিতে ফলন বাড়ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তাদের ধান জমিতে তারা আলোক ফাঁদ ব্যবহার করছে বলে জানায়।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন স্থানে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। জমির পাশেই একটি পাত্রে পানির মধ্যে কেরোসিন ঢেলে অথবা সাবানের ফেনা তৈরি করে তার এক ফুট উপরে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। পোকা-মাকড় আলোর কাছে এসেই পানিতে পড়ে আর উঠতে পারে না। মরে যাওয়া বা পানিতে পড়া পোকা-মাকড় দেখেই বুঝতে পারি জমিতে কি ধরণের পোকা-মাকড় আক্রমন করেছে। সে অনুযায়ী জমিতে কি ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে তা কৃষকেদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকরা এতে লাভবান হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম ভূইয়া বলেন , মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে অপকারী পোকা দমন ও শনাক্তকরণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা হচ্ছে। পোকা দমনের এই অভিযান আমন ধান কাটা পর্যন্ত চলবে বলে তিনি জানান।
পোকামাকড়ের ক্ষতির হাত থেকে ফসল রক্ষায় পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশ বান্ধব আলোক ফাঁদ স্থাপনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমান মাঠে ফসলের যে অবস্থা কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা যায়।