ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওলকচু চাষে বেশি লাভ

ওলকচু চাষে বেশি লাভ

স্বল্প বিনিয়োগে অল্পদিনে অধিক মুনাফা হওয়ায় রাজবাড়ীতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ওলকচু চাষাবাদ। লাভের পরিমাণ ভালো পেয়ে ওলকচু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ওলকচু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটছে কৃষকের ভাগ্যের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ওলকচু চাষাবাদ করেছেন এ জেলার কৃষকরা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের সিংগা গ্রামের কৃষক রনজন কুমার সেন ২০শতাংশ জমিতে শ্বেতী জাতীয় ৪শ’টি ওলকচু চাষাবাদ করেছেন। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও লেবার খরচ পেয়েছিলেন। নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে ওলকচুর গাছগুলো ৪/৫ হাত লম্বা হয়েছে। কয়েকজন লেবার জমিতে ঘাস পরিস্কার, পাতা পচা ও কান্ড পড়া ওল গাছগুলো  তুলে ফেলছেন।

ওলচাষি রনজন কুমার সেন বলেন, আগে জমিতে বাণ্যিজিকভাবে ওলকচু চাষাবাদ দেখিনি। আমি এ বছর প্রথম চাষ শুরু করেছি। আশাকরি অনেক ভালো ফলন পাবো। ২০ শতাংশ জমি থেকে প্রায় ১০০ মণ ওলকচু বিক্রি করতে পারবো। কচুর পাশাপাশি বীজও সংগ্রহ করে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার সম্ভবনা দেখছি। বর্তমান বাজারে ওলকচুর চাহিদা ব্যাপক রয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওল কচু গাছে তেমন কোনো  রোগ হয় না, তবে পাতা ও কাণ্ড পচা রোগ দেখা যেতে পারে। ওলকচুর ক্ষেত্রে কীট পতঙ্গ তেমন কোন সমস্যা নেই। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, গোড়া উচু করে দেয়া ও গোড়ায় খড় বা আচ্ছাদন দিয়ে ঢেকে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জৈব সার বেশি ব্যবহার করা ভালো। তবে রাসায়নিক সার যেমন ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি সারও কিছু দেওয়া যায়। গাছ লাগানোর ৭ থেকে ৯ মাস পর যখন ৮০ শতাংশ গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে, তখন ওল সংগ্রহ করতে হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন শেখ জানান, চলতি অর্থ বছরে সদর উপজেলায় ৪ একর জমিতে ওলকচু চাষের ১৫টি প্রদশর্ণী রয়েছে। এটি একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ সবজি। উপজেলা কৃষি অফিস ও ইউনিয়ন পর্যায়ের উপ সহকারি কৃষি অফিসারগণ নিয়মিত কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন।

পাংশা উপজেলা কৃষি অফিসার রতন কুমার ঘোষ জানান, চলতি বছর পাংশা উপজেলার প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে কন্দাল ফসল উৎপাদন প্রদর্শণী শ্বেতী জাতের ওল কচুচাষ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এ কচুচাষ।  উপজেলা কৃষি অফিসের আওতায় ১০টি প্রদর্শণীতে ২০০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এ ওলকচু চাষিদের চাষবাদ ও রোগ পোকামাকড় সংক্রান্ত কারিগরি বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার খোকন উজ্জামান জানান, অপচলিত ফসলকে পূণরায় কৃষকদের মাঝে বহুল আবাদ বিস্তার ঘটাতে সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চলতি অর্থ বছরে ১০টি প্রদর্শণী প্রকল্পসহ প্রায় ২ হেক্টর জমিতে ওলকচু চাষ করেছেন চাষীরা।

কালুখালী উপজেলা কৃষি অফিসার পূর্ণিমা হালদার বলেন, উপজেলার ৭জন কৃষক নিজ উদ্যোগে ওলকচু চাষে আগ্রহী হয়ে প্রায় ২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছেন। সরকারি ভাবে বীজ, সার না দিতে পারলেও কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক চাষীদের সাথে যোগাযোগ ও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন।

ওলকচু চাষী কালুখালী উপজেলা বোয়ালিয়া ইউনিয়নের হাট গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর আগ থেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভাবে প্রায় ১ একর জমিতে ওলকচু চাষাবাদ করছি। এ বছর ৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশা করি, ফলন ভালো পাবো এবং কাঙ্খিত বাজার মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হবো।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস.এম সহীদ নূর আকবর জানান , রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক কন্দাল ফসলের উৎপাদন বিস্তারের লক্ষ্যে চলতি বছরে ১২০ জন কৃষক কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে ওলকচুর বীজ, সার ও পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। নির্দিষ্ট সাইজের ওলকচু বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে কৃষকরা ফসলের পাশাপাশি বীজ বিক্রি করেও অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন