ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেশি বিপাকে বাড়ি-কারাখানা মালিকরা

বেশি বিপাকে বাড়ি-কারাখানা মালিকরা

বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে সারাদেশের মতো গেল দুই বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অব্যাহত মন্দার কারণে ছোট হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার নিয়মিত লোকসানের মুখে বাধ্য হয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক শিল্প-মালিক। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক কর্মজীবী। যার প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। বিশেষ করে শিল্পনগরী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া সোনারগাঁয়ে তৈরি পোশাকশিল্পে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে করোনা মহামারির কারণে।

গত ২০১৬ সালের শেষের দিকে সোনারগাঁ উপজেলাকে শিল্প-নগরী এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। যদিও এর বহু আগে থেকে মেঘনা ও কাঁচপুর ইউনিয়নকে শিল্পনগরী ঘোষণা করা হয়। তবে নতুন শিল্পনগরী হিসেবে সোনারগাঁকে ঘোষণার পর গড়ে উঠতে থাকে বড় বড় শিল্প কারখানা ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। বর্তমানে মেঘনা গ্রুপের দুটি ও আমার গ্রুপের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে।

এছাড়া কাঁচপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে আরো বহু প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সোনারগাঁয়ের ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও উপজেলার চারপাশে মেঘনা শীতলক্ষা ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদী থাকার কারণে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন সুবিধার কারণে শিল্প মালিকরা শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখছেন সোনারগাঁকে। গেল কয়েক বছরের ব্যবধানে সোনারগাঁ এখন দেশের কয়েকটি শিল্প অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম।

তবে করোনা মহামারির কারণে প্রতিটি শিল্পখাতে দেখা গেছে মন্দা। বন্ধ হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা সিনহা গামের্ন্ট এন্ড ওপেক্সের মতো কয়েকটি ছোট বড় ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। আবার অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশি বায়ারদের সময় মতো মালামাল শিপমেন্ট করতে না পারায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছিলেন না। এতে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ঝিমিয়ে পড়ে উৎপাদন ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হন মালিক কর্মচারী উভয়ই। যে কারণে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও ক্ষদ্র ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েন। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলখ্যাত মেঘনা ও কাঁচপুর এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে বেছে নিয়েছেন বিকল্প পেশা।

উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ স্থানের অটোরিকশা চালদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আগে তারা রাজধানী ও উপজেলার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তবে করোনার কারণে কারাখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোকবল ছাঁটাই হতে থাকে। অনেক কারাখানার গেট বন্ধ হয়ে যায়। এতে তারা বেকার হয়ে পড়েন। পরে জমানো সম্বল দিয়ে অটোরিকশা কিনে পরিবারের ব্যয় মেটাচ্ছেন। আর যাদের জামানো কোনো অর্থ ছিল না তারা শহর ছেড়ে গ্রামে দিয়ে অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে, শিল্প কারখানা বন্ধসহ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে থাকা শ্রমিক ও কর্মচারীরা ভাড়া বাসা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পাড়ি দিয়েছে। এতে যারা বাসাভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করে চলতেন তারা পড়েছেন বিপাকে। বাসাগুলো খালি পড়ে থাকায় দারুণ অর্থ কষ্টে রয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে মেঘনা শিল্পাঞ্চলের মাসুম বিল্লাল দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, যেসব শ্রমিক ও কর্মচারী তার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে শিল্পকারখানায় কাজ করতেন করোনার কারণে তারা চলে গেছেন। বাসা খালি হয়ে যাওয়ার কারণে তার উর্পাজনে ভাটা পড়েছে।

দেশের মধ্যে কাঁচপুর একটি অন্যতম শিল্প এলাকা। এখানে লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী বসবাস করতেন। সিনহার মতো বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শ্রমিকরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এতে স্থানীয় মুদি দোকানিদের বেচাবিক্রি কমে গেছে। কাঁচপুর এলাকার মুদি দোকানি রমিজ আনন্দবাজারকে জানান, অনেক শ্রমিক ছিলো যারা বাকিতে মালামাল কিনে মাস শেষে বেতন পেয়ে দেনা পরিশোধ করতেন, তাদের অনেকে এখন নেই। অনেকে আবার বকেয়া বেতন না পেয়ে রাতারাতি টাকা না দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। এতে তার মতো অনেক দোকানদার আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মেঘনা শিল্পাঞ্চলে ও ইকোনোমি জোনে কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে আল মোস্তফা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামালের। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে কয়েকটা কারখানা ছাড়া বাকি সবগুলি প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস লোকসান গুণতে হচ্ছে তাকে। মোস্তফা কামাল আনন্দবাজারকে বলেন, শ্রমিকদের বেতন ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছি না। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের কারণে ব্যাংকের সুদ দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার থেকে প্রণোদনা পেলেও তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না। এভাবে চললে কিছুদিন পর তার প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন