শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্দরের বিশ্বমানে বদল

বন্দরের বিশ্বমানে বদল

দেশের দ্রুত সম্প্রসারণমুখী অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার একমাত্র ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় এ বন্দরে। তবে নানা সীমাবদ্ধতায় বন্দরের সক্ষমতা কমতে থাকায় পরিবর্তিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরকে সচল রাখার জন্য বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), বে-টার্মিনাল ও লালদিয়া টার্মিনাল নামে তিনটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

সূত্রমতে, বে-টার্মিনালের ভূমি অধিগ্রহণসহ ইতোমধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হলেও লালদিয়া টার্মিনালটি ফাইলবন্দী হয়ে রয়েছে। এ দুটি প্রকল্প ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল বা পিসিটির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করে অপারেশনাল কাজ শুরুর ওপরই জোর দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ১৩ জুন সরকার এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে করোনামহামারিসহ নানা কারণে ধীরগতি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পর সর্বশেষ আগামী জুনে টার্মিনাল চালুর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। পতেঙ্গা সৈকত এলাকা ঘেঁষা টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের ইতিহাসে দেশে সর্ববৃহৎ অবকাঠামো হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর পরিণত হবে বিশ্বমানের বন্দরে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে বোটক্লাব পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে পিসিটি। এরমধ্যে তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং একটি তেল খালাসের ডলফিন জেটি। প্রকল্পে ৩২ একর এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ৬০০ মিটার দীর্ঘ তিনটি জেটি। থাকছে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি ও এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং সড়ক। এছাড়া রুবি সিমেন্টের পাশে গড়ে তোলা ১৬ একর আয়তনের কন্টেইনার ইয়ার্ডটিকে পিসিটির জন্য ডেডিকেটেড করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  মৎস খামারে ক্রেতা সংকট

ইতোমধ্যে টার্মিনালের পাশের সড়কটি সোজা করে চালু করা হয়েছে। ওই সড়কের ফ্লাইওভারটিও যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এখন জেটি নির্মাণ কাজ চলছে। নতুন এই টার্মিনাল চালু হলে চার লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। কন্টেইনারের পাশাপাশি এই টার্মিনালে থাকবে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে। গতিশীল হবে সার্বিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের ইমেজ আরো বাড়বে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব শিগগির এই টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানো যাবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। বর্তমানে এ বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামে তিনটি টার্মিনালে মোট ১৯টি জেটি রয়েছে। তবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও বন্দরের লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়বে। অবশ্য ইতোমধ্যে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে চট্টগ্রাম বন্দর। গেল বছর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৩২ লাখ টুয়েন্টি ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস (টিইইউএস) ছাড়িয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলছেন, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের বাড়তি চাহিদা মোকাবেলা করতে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বন্দরে ৫০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা আছে। বে-টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে বন্দরে কন্টেনার রাখার ধারণক্ষমতার পাশাপাশি কাজের সক্ষমতা আরো বাড়বে।

আরও পড়ুনঃ  ৭৫ হাজার রোগীর মধ্যে ৭৪ হাজারই চীনে

প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় ও সমুদ্রপাড়ের শহর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। এরপর ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। প্রায় এক যুগ পর ১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। একই বছরে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। এরপর ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ে সংযোগ হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টে পরিণত করা হয়। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টকে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। এটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন