ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পলাশ-অ্যাগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের (সবুজ প্রকল্প) পানি না ছাড়ার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ এলাকার ৩৪ হাজার চাষি। পানি না পাওয়ায় অনাবাদি রয়েছে অধিকাংশ জমি। আবার পানি না পাওয়ায় জমিতে ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলছে দু’বছর যাবত। এ জন্য মহাসড়কের পাশের বিএডিসির পানি প্রবাহের খালটি বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। যার কারণে আশুগঞ্জ পলাশ-অ্যাগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের (সবুজ প্রকল্প) পানি ছাড়া সম্ভব হয়নি।
এতে আশুগঞ্জ, সরাইল, নবীনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। যার কারণে সরকারের ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শংকা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সমস্যা নিরসনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম সম্প্রতি বিএডিসির খাল পরিদর্শন করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রমতে, ১৯৭৫ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে এবং ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছর থেকে বিএডিসির তত্ত্বাবধানে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যপানি রেগুলেটরের মাধ্যমে গতিপথ পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সরাইল, নবীনগর এবং সদর উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে নামমাত্র মূল্যে সেচ সুবিধা দেয়া হয়। এ প্রকল্পে শুরুতেই সেচের পানি ধরে রাখতে ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্গত গরম পানি ঠান্ডা করতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের এ পুকুরকে পানির প্রধান কুলিং রিজার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কিছুদিন আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্পের কুলিং রিজার্ভার পুকুরটি ভরাট করে ফেলে।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ কিমি. মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে দুই বছর ধরে। এ কাজের জন্য আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশের খাল বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। পাশাপাশি সেচ প্রকল্পের অবশিষ্ট রির্জাভার পুকুর ও আশুগঞ্জ-সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেষে এ প্রকল্পের প্রায় ১১ কিলোমিটার ড্রেন ও খাল বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলে। যার কারণে এ প্রকল্পের সেচ সুবিধা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
ফলে বিএডিসির খালে সবুজ প্রকল্পের পানি ছাড়া সম্ভব হয়নি। এসব কারণে প্রকল্পের প্রায় ৩৪ হাজার সুবিধাভোগী কৃষক নামমাত্র সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি ফসলি জমিতে পানি না দেয়ার কারণে ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ জমিতে বোরো চারা রোপন করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুবিধাভোগী কৃষকেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর, সোনারামপুর, তাজপুর, বগইর, মইসার, যাত্রাপুর, সরাইল উপজেলার, পানিশ্বর ইউনিয়নের পানিশ্বর, বিটঘর, বেড়তলা, নাইলা, সদর উপজেলার কুট্টাপাড়া, সৈয়দটুলা, নিজসরাইল, উচারিয়াপাড়া, চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর, চুন্টা, বড়বল্লা, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ, বারিউড়া, শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর ও দীঘিরপাড় এলাকার কোনো জমিতে পানি পৌঁছায়নি। যার কারণে এখনো বোরো চারা রোপণ করা হয়নি অধিকাংশ জমিতে। অন্যদিকে, যে জমিগুলোতে ডিপটিউবওয়েলের মাধ্যমে চারারোপণ করা হয়েছিল সে সব জমির চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। বীজতলার চারাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আফতাব মিয়া বলেন, সেচ প্রকল্পের অধীনে তিনটি সেচ পাম্প রয়েছে আমাদের। খালে এখনো পানি আসেনি। এলাকার শতাধিক একর জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। প্রতিদিন নানা জায়গায় যাচ্ছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বীজতলা নষ্ট হচ্ছে।
আশুগঞ্জের সোহাগপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেন নামে এক সুবিধাভোগী বলেন, ৩৪ হাজার হেক্টর জমির পানি প্রবাহের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করেই খাল ভরাট করে সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে কৃষকেরা পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে চারারোপণ করতে না পারলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে। এত অল্প সময়ের মধ্যে কৃষকদের পক্ষে নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। তাই সবুজ প্রকল্পের পানিই ভরসা।
বিএডিসির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্ষুত্র সেচ) রুবায়েত ফয়সাল আল মাসুম বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ ১৫ জানুয়ারি পানি ছাড়ার কথা দিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী পানি ছাড়া হয়েছিল। তবে বিএডিসির খালে বালু ভরাটের কারণে পানি যাচ্ছে না। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন জায়গার প্রতিবন্ধকতা সারিয়ে পানি সরাইল পর্যন্ত পৌঁছানের জন্য চেষ্টা করছি। আশা করি আগামী তিনদিনের মধ্যে এটি সম্ভব হবে। পানি প্রবাহ ঠিক না থাকলে ১৬ হাজার হেক্টর জমি বোরে আবাদ সমস্যায় পড়বে।
এদিকে সম্প্রতি বিএডিসির আশুগঞ্জ-সরাইলের ১১ কিলোমিটার ভরাটকৃত খাল পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। এসময় তিনি বলেন, খুব দ্রুত খালের ভরাট করা জায়গার বালু অপসারণ করে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সবুজ প্রকল্পের পানি ছাড়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আনন্দবাজার/শহক