দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের সঙ্গে ইউরোপের কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৫০ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) তৈরি পোশাক পণ্য নিয়ে ইতালির রেভনা বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে এই রুটের প্রথম জাহাজ ‘সোঙ্গা- চিতা’। বাংলাদেশ-ইতালি সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে ইউরোপে পণ্য রফতানিতে নতুন দিগন্ত খুলে গেল।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে ইতালি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৪ জেটিতে ভিড়েছিল এ রুটের প্রথম জাহাজ এমভি ‘সোঙ্গা চিতা’। জাহাজটি মাঝপথে কোনো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে না থেমেই মাত্র ১৫ দিনে ইতালির সিভিটাভিসিয়া সমুদ্রবন্দরে পৌঁছবে। এই জাহাজটি ইতালিতে পোশাক পণ্য নিয়ে পৌঁছলে পণ্য রপ্তানিতে নতুন যুগের সূচনা হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পণ্য পাঠাতে সময় ও ব্যয় দুটোরই সাশ্রয় হবে। এতে ব্যবসায়িদের খরচ কমছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
বন্দর সূত্রমতে, গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ৪৯৩ বক্সে ৯৫০ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) তৈরি পোশাকপণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটি ত্যাগ করে সোঙ্গা-চিতা নামের জাহাজটি। এর আগে এনসিটি জেটিতে অতিথিদের নিয়ে কেক কেটে বাংলাদেশ-ইতালি রুটে জাহাজ চলাচল কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান এম শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশ-ইতালি সরাসরি জাহাজ চলাচল আমাদের অর্থনীতিতে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা। পোশাক রপ্তানির গুরুত্ব বিবেচনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতালি-চট্টগ্রাম রুটের জাহাজকে বার্থিং, কি গ্যান্ট্রি ক্রেন বরাদ্দসহ সব সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইতালি থেকে আসার পথে জাহাজটি বিভিন্ন বন্দরের কনটেইনার আনতে পারবে। অন্যান্য শিপিং লাইনও এ ধরনের সরাসরি জাহাজ চালু করতে চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, রিলায়েন্স শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মো. রাশেদ প্রমুখ।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা বা মালয়েশিয়ার বন্দরে প্রথমে পোশাক রফতানির কনটেইনার পাঠানো হতো। সেখান থেকে বড় জাহাজে সেই কনটেইনারগুলো ইউরোপ আমেরিকার বায়ারদের কাছে যেত। চট্টগ্রাম থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে পাঠানো এবং সেখান থেকে পুনরায় বায়ারের কাছে পণ্য পৌঁছাতে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় বেশি হতো।
এমন পদ্ধতিতে ইতালিতে পণ্য যেতে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪- ২৮ দিন। সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় বড় জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হলে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিনের বেশি। ইতালি-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখা গেলে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। কারণ এতে লিড টাইম ও ভাড়া সাশ্রয় হবে।
গেল বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ইতালি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়। প্রথম যাত্রায় ইতালি থেকে শুধু খালি কনটেইনার আনা হয়েছিল। জাহাজটি আবার চট্টগ্রামে আসবে ১৫ মার্চ।
এদিকে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমেরিকা হচ্ছে পোশাক ব্যবসায়ীদের জন্য বড় বাজার। তবে ইউরোপ থেকেও প্রচুর কার্যাদেশ আসছে। পোশাক কারখানাগুলো এখন সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছে। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে সরাসরি জাহাজ চালু হবার কারণে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সময় ও ব্যয় অনেকটাই কমে যাবে। লিড টাইম ধরে রাখতে পারলে আমাদের কার্যাদেশ আরো বাড়বে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম-সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জন্য লিড টাইম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ধরে রাখতে না পারলে বা মেনটেইন করতে না পারলে ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে সরাসরি জাহাজ চালু হবার কারণে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি আমাদের কাজে লাগাতে হবে।