শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের থাবা শুঁটকিপল্লীতে

শীতের থাবা শুঁটকিপল্লীতে

করোনা মহামারির পর শৈতপ্রবাহে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুঁটকি আড়ত নীলফামারীর সৈয়দপুরের শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায় ধস নেমেছে। লোকসানে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছেন। কেউ আবার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পরিবার পরিজন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারিতে বেচাকেনা থমকে যাওয়ার পর সম্প্রতি টানা শৈত্যপ্রবাহে শুঁটকি আড়তে হতাশা দেখা দিয়েছে। তীব্র শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারী ক্রেতারা আড়তে আসতে না পারায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বেচাবিক্রি না হওয়ায় বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকিগুলো বিবর্ণ ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিগত ১৯৮৩ সালে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নিয়ামতপুর এলাকায় গড়ে উঠে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুঁটকির আড়ত। প্রথমে কয়েকজন মিলে শুরু করলেও বর্তমানে ১৫ জন আড়তদার ব্যবসা করছেন। তবে ইতোমধ্যে পুঁজির অভাবে ছয়জন আড়তদারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আগে ব্যবসায়ী ও খুচরা ক্রেতা মিলে দিনে ১৫-১৬ হাজার লোক আসতেন পল্লীতে। দিনে ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বেচাকেনা হতো। তবে গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে ক্রেতাদের ভিড় একেবারেই কমে গেছে। গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ লাখ টাকার শুঁটকি বেচাকেনা হচ্ছে।

সৈয়দপুরের আড়তে শুঁটকি আসে মূলত চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী এবং পাবনা থেকে। পাশাপাশি ভারতীয় শুঁটকিও বৈধভাবে হিলি ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ঢোকে। সামুদ্রিক ও মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মাছের চাহিদা অনেক বেশি। স্থানীয় ব্যবসায়ী তেমন না থাকলেও এখানকার বেশিরভাগ আড়তদার পাবনা, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং ফরিদপুর জেলার।

আরও পড়ুনঃ  আমদানি বেশি, দাম কম

গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বেচাবিক্রি কিংবা ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। শুঁটকিপল্লীর লিংকন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার রোস্তম আলী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, সারাদিনে তার মাত্র ২ হাজার টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে। অথচ আগে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি করতেন। তিনি বলেন, শীতকালে এমনিতেই ব্যবসা কম হয়। তবে গত কয়েকদিন ধরে ব্যবসার এমন ধস গত দশ বছরেও হয়নি। তাছাড়া শুঁটকির দামও কমেছে গেছে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা করে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হয়েছে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ী আজাহার আলী দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, প্রচণ্ড শীতে ক্রেতারা বাড়ির বাইরে বের হন না। তাছাড়া শীতকালিন সবজি বাজারে প্রচুর আমদানি থাকায় শুঁটকি বিক্রি কম হয়। ঘন কুয়াশার কারণে রোদ না থাকায় বিশেষ করে সামুদ্রিক শুঁটকি বিবর্ণ ও গন্ধ হয়। ক্রেতারা তা দেখে কিনতে চান না। তাই সামান্য শুঁটকি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।

নিয়ামতপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বাছেদ আলী বাখার আনন্দবাজারকে জানান, ব্যবসা একেবারে মন্দা। পাইকাররাও আসছেন না। তার ওপর ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যাংকের চাপ। টাকা অনাদায়ে মামলার হুমকি। এসব কারণে অনেক ব্যবসায়ী শুঁটকি ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বাছেদ আলী জানান, বর্তমানে এখানকার সব আড়তদারই ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছেন। লোকজনের আনাগোনা কমে যাওয়ায় শুঁটকি ব্যবসা আগের মতো চলছে না।

নীলফামারী জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন আনন্দবাজারকে জানান, দেশে শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। যা দেশের মৎস্যজাত আমিষের চাহিদা পূরণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুনঃ  নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে সবজি

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন