ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল-পাটায় সুদিন

শিল-পাটায় সুদিন

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সিলেটে কদর কমতে শুরু করেছিলো মরিচ-মসলা বাটার কাজে ব্যবহৃত ‘শিল-পাটা’র। কিন্তু সেই সঙ্গে উধাও হয়ে গিয়েছিলো তরকারির প্রকৃত স্বাদ। তবে হারানো সেই স্বাদ ফিরে পেতে আবারও সিলেটের লোকজন ঝুঁকছেন ‘শিল-পাটায়’। ফলে কিছুটা সুদিন ফিরতে শুরু করেছে সিলেটের জৈন্তাপুরের শিল-পাটার কারিগরদের।

শিলা-পাটা বেশি তৈরি হয় পাথর-রাজ্য খ্যাত সিলেটের জৈন্তাপুরে। এ উপজেলার দক্ষ কারিগররা তৈরি করেন নানা ধরনে নকশা সংবলিত শিল-পাটা। বিক্রির জন্য এসব শিল-পাটা পরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সিলেটের অন্যতম পাথর রাজ্যে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর তীরে সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকায় রয়েছে শিল-পাটার কারিগরদের কারখানা। ওখানে কারিগরদের নিপুণ কারিগরির মাধ্যমে তৈরি হয় আদি যুগের মসলা তৈরির যন্ত্র শিল-পাটা। শিল-পাটা তৈরির সময় সেগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা ধরনের নকশা।

একসময় মসলা বাটার একমাত্র সহজ উপায় ছিলো শিল-পাটা। কিন্তু সময় পরিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ শিল্পটি বিলুপ্ত হতে চলেছিলো। কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে শিল-পাটার কারিগররা জড়িয়ে পড়তে শুরু করেন অন্য পেশায়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে সিলেটের জাফলং এলাকায় কিছু সংখ্যক কারিগর তাদের পুরাতন পেশাটি আকড়ে ধরে পড়ে থাকেন। সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে মেশিনের গুড়ো মসলা আর শিল-পাটায় বাটা মসলার স্বাদের তারতম্য বুঝতে পারায় ঘরে ঘরে কিছুটা বেড়েছে শিল-পাটার ব্যবহার। তাই ধীরে ধীরে যে জৈন্তাপুরের শিল-পাটার কারিগরদের ফিরতে শুরু করেছে সুদিন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর তীরের শিল-পাটার কারিগরদের কদর বাড়ছে। কারিগররা তাদের নিপুণ কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নানা রকমের বাহারি নকশায় তৈরি করছেন শিল-পাটা। আধুনিকতার যুগেও এখন মানুষ প্রতিনিয়িত শিল-পাটা কিনছে এবং ঘরে ঘরে এর ব্যবহার বাড়ছে বলে জানিয়ছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাফলং এলাকার শিল-পাটার কারিগর কুকিল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনসহ ১০-১২জন কারিগরের সঙ্গে কথা হলে তারা দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, আধুনিক যন্ত্রের যাতাকলে পড়ে আমাদের পেশাটি বিলুপ্ত হতে চলেছিলো। অনেক কারিগর এ পেশা ছেড়ে অন্যান্য পেশায় চলে গেছেন। আমরা কিছুসংখ্যক লোক শিল-পাটার ব্যবসাকে আঁকড়ে ধরে রাখি। এই সামান্য আয় দিয়ে কোনোমতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলছি। তবে বর্তমানে শিল-পাটার ব্যবসাটি কিছুটা চাঙা হয়েছে। চাহিদা বেড়েছে মসলা বাটার এই সনাতন দুই পাথরখণ্ডের। তারা বলেন- যে হারে শিল-পাটার কদর বাড়ছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে আমরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবো।

কারিগররা জানান, আকারভেদে শিল-পাটার দাম ২শ থেকে ৮শ টাকা। আমাদের দিক থেকে এই দাম তুলনামূলকভাবে কম। কারণ পাথর সংকটের কারণে পাথর সংগ্রহ করতে আমাদের বেশি টাকা গুনতে হয়। কিন্তু কাস্টমারদের কথা চিন্তা করে বেশি দাম নিতে পারি না। দাম কিছুটা কম রেখেই ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার ভিতরেই রাখতে চাই শিল-পাটা। যাতে বিক্রির হার বাড়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন