বান্দরবানে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। আর পাহাড়কেটে ও কৃষিজমির মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এর ফলে বনভূমি উজাড়ের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এমনকি অধিকাংশ ইটভাটার মালিক শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পার্বত্যজেলা বান্দরবানে গড়ে উঠেছে এ ইটভাটা।
জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় রয়েছে ৭০টিরও বেশি ইটভাটা। এরমধ্যে শুধু লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে রয়েছে ২৮টি। পাহাড়কেটে বনাঞ্চলের পাশেই গড়ে উঠেছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এসব ইটভাটার কোনটিতেই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। ইটভাটায় জ¦ালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহৃত হচ্ছে বনের কাঠ। পাশাপাশি কাঁচামাল হিসেবে জলাশয়ের মাটি ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। এজন্য এস্কেভেটর দিয়ে দিনরাত কাটা হচ্ছে বড় বড় পাহাড় আর উজাড় হচ্ছে শতশত একর বনভূমি।
ইট তৈরিতে পাহাড়ের মাটি ও বনের কাঠ ব্যবহার করায় একদিকে যেমন ধংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ তেমনি ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারাও। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ তেমনি অতিরিক্ত ইটবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে যাতায়তের সরকারি রাস্তা। এতে ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ ও স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরা।
ফাইতং ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ইটভাটার কারণে আমাদের রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকাল আসলে আমাদের চরমভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়াও ইটভাটার কালোধোঁয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মানুষজন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। উন্নয়নের জন্য ইট দরকার। তবে তা সরকারি নিয়ম মেনে করলে সবার জন্য ভালো হয়।
এদিকে ইটভাটায় পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের কথা অস্বীকার ও সরকারি নিয়মানুযায়ি কয়লার চুল্লী দিয়ে ইটভাটা তৈরিতে অধিক খরচ হওয়ায় নিয়ম মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ফাইতং ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, সরকারি নিয়মকানুন মেনে ইটভাটা পরিচালনা করতে গেলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ কয়লার দর অনেক বেশি। এবিষয়ে বান্দরবান বিভাগীয় বনকর্মকর্তা কামাল আহমেদ বলেন, বনের গাছ পোড়ালে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তারা সময় দিলে আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানের সবগুলো ইটভাটা অবৈধ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাহাড়কেটে গড়ে উঠা অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। আবারো অভিযান পরিচালনা করা হবে।
একটি ইটভাটায় দৈনিক পোড়ানো হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ কাঠ। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। তাই শুধুমাত্র জরিমানা দিয়ে নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ইটভাটা তৈরিতে সরকারি নিয়ম মানানোর পাশাপাশি জনসচেতনতাও দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
আনন্দবাজার/শহক