গাজীপুরের শ্রীপুরে কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের সফল উদ্যোক্তা দেলোয়ারের মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স বাগানে আবারো ফুটেছে সারি সারি নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুল। শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। এর উৎপত্তির আদিস্থান নেদারল্যান্ডস। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এ ফুলের পরিচিতি রয়েছে।
অনেকের মতে এটি পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল থেকে উদ্ভুত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। তার ফুলবাগানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ ও উৎপাদন করে আজ সেই স্বপ্নকে অনেকটাই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
ফুলচাষি দেলোয়ার জানান, ২০২০ সালে তিনি সীমিত পরিসরে তার বাগানে চাষ করে কয়েকটি রঙের টিউলিপ ফুল পেয়েছিলাম। এবার তা থেকে চারা করে টিউবার ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এখন টিউলিপ ঘিরে মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে সম্ভাবনার স্বপ্ন। এ টিউলিপ আমাদের দেশে কৃষি অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী হওয়ার পথও খুলে দিচ্ছে।
দেশের মাটিতে প্রথম টিউলিপ ফুল ফুটায় তা নিয়ে রীতিমত দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তার শ্রীপুরের বাড়িতে ভিড় করে। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেলোয়ারের বাগানে দ্বিতীয় বারের মতো টিউলিপ ফুলফুটে। এ টিউলিপ নজর কেড়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শ্রীপুরে আমার বাগানে পরপর দুইবার টিউলিপ ফুটায় সাধারণ মানুষের কাছ তা ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ড থেকে হলুদ, লাল, চার ধরনের পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেল রঙেরসহ ১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বাল্ব (বীজ) আমদানি করা হয়েছে।
আমদানি করা টিউলিপ বাল্ব দিয়ে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে এক হাজার ও যশোরের গদখালিতে পাঁচ হাজার বাল্ব বাগান তৈরী করে দেশের টিউলিপের এলাকা নির্ধারণে সম্ভাবতা যাচাই করা হচ্ছে।
এছাড়াও অনেক ছোট উদ্যোক্তা টিউলিপের বাল্ব সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মিটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি।
এরই মধ্যে জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর বিদেশী টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে এসেছে একের পর এক সফলতা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা(ফুল গবেষক) ফারজানা নাসরিন খান বলেন, আমাদের দেশে টিউলিপ ঘিরে এখন সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
আগে শীতের সময়ে বাসা বাড়ির টবে অনেকেই টিউলিপের চাষ করলেও এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে এটা সত্যিই আনন্দের খবর। আমাদের দেশে টিউলিপের একটি বাজার রয়েছে, দেশের বাহিরেও বাজার রয়েছে। কৃষি অর্থনীতিতে দারুন একটি আশা তৈরি হয়েছে। চাষ স্মরণে সম্প্রসারণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকেও সহায়তার হাত বাড়াতে হবে।
আনন্দবাজার/শহক