- রাণীনগরের মাছ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়
- চলতিবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার টন
নওগাঁর রাণীনগরে বাণিজ্যিকভিত্তিতে মাছ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে এ উপজেলায় দেশিয়সহ উন্নতজাতের মাছ চাষ করা হচ্ছে। মাছচাষে ব্যবহার করা হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শ ও সহযোগীতায় লাভের মুখ দেখছেন মাছচাষিরা। অর্ধিক লাভে মাছচাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলাজুড়ে সরকারি ও ব্যক্তিগত ছোট-বড় মিলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুকুর রয়েছে। অধিকাংশ পুকুরেই মাছ চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছেন। এর মধ্যে উপজেলার পারইল, বড়গাছা, একডালা, কালীগ্রাম ইউনিয়নে মাছচাষিরা বেশিরভাগ পুকুরে দেশিয় গুলশা, পবদা, ট্যাংরা, সিং ও মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। আর সদর, মিরাট, গোনা ও কাশিমপুর ইউনিয়নে কার্প, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার, বিগহেড, কালিবাউশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। এছাড়া পাঙ্গাস ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন পুকুরে চাষ করছেন চাষিরা। মৎস্য অফিস থেকে চলতি বছর উপজেলার ৭ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মৎস্য অফিস সূত্র আরও জানায়, প্রতি অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার শতাধিক মাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আর এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা মাছচাষে আগ্রহী হয়েছেন ও সুফল পাচ্ছেন। উপজেলায় প্রায় ৩২শ’ মাছচাষি রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার চাষি বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করছেন। মাছচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, আগের তুলনায় মাছচাষে নতুন নতুন প্রযুক্তি এসেছে। বর্তমানে আমি ১০ থেকে ১২ টি পুকুরে মাছ চাষ করছি। এর মধ্যে ৪টি পুকুরে দেশিয় প্রজাতির ছোট মাছ। আর অন্যসব পুকুরে বাংলা ছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির মাছ চাষ করছি। মাছ চাষি আহাদ শেখ বাবু জানান, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে পুকুরে মাছ চাষ করে আসছি। বর্তমানে ২৫ বিঘার জলার ৫টি বড় পুকুরে দেশিয় মাছের পাশাপাশি কানচ, পবা, গুলশা, পাঙ্গাস মাছচাষ করছি। গতবছর মাছের দর বাজারে কম হওয়ায় চাষিদের লোকসানগুণতে হয়েছে। বর্তমানে বাজারে মাছের দর বেশ ভালো।
রাণীনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, উপজেলায় কার্প মাছের সঙ্গে দেশিয় প্রজাতির ছোট মাছ চাষে চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছেন। এলাকায় বিভিন্ন পুকুরে এসব মাছ চাষ করা হচ্ছে। মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার চাষিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তাছাড়া বর্তমানে মৎস্য অফিস থেকে চাষিদের পুকুরের পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে চাষিরা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছেন। আর উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষে পুকুরে এয়ারেটর ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ বেড়েছে। বেড়েছে দেশিয় প্রজাতির ছোট মাছ চাষ। আমরা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষিদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। চলতিবছর উপজেলায় ৭ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।
আনন্দবাজার/এম.আর