ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘সোনালি আঁশ’

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘সোনালি আঁশ’

একসময় পাটের জৌলুসে নাম হয়েছিল ‘সোনালি আঁশ’। তবে প্ল¬াস্টিকে বাজার সয়লাব হওয়াতে মর্যাদা ও অবস্থান দুটিই হারায় পাট। এতে পরিবেশ দূষণ ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি একের পর এক বন্ধ হয়েছে বড়-বড় অনেক পাটকল। তাতে বেকার হয়ে পড়ে লাখ-লাখ শ্রমিক-কর্মচারি। অবহেলা ও বাজার দর কমে যাওয়ায় কৃষকরা মুখ ঘুরিয়ে নেন পাট চাষে।

তবে দিনাজপুরে আবারও স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাট। এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে সাতটি পাটকল। কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। চাহিদা ও দাম থাকায় কৃষকরাও আবার পাট চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন, পাটশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দিনাজপুরে ফসলিজমিতে ধানের চাষ বেশি হয়। একযুগ আগেও পাট চাষ সেভাবে হতো না বললেই চলে। তবে ২০০৮-০৯ সালের পর পরিস্থিতি ঘুরতে থাকে। পরিবেশ দূষণরোধে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে ও পাটজাতপণ্য ব্যবহারে সরকারের প্রচার-প্রচারণা, দেশে-বিদেশে পাটজাত পণ্যের চাহিদা আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

এতে পাটশিল্পের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। গত একযুগে দিনাজপুরে গড়ে উঠেছে একে একে সাতটি পাটকল। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষের। পাশাপাশি পাট উৎপাদন ও পাটজাত পণ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কয়েক শ কুটির শিল্প ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব শিল্প ও পাট চাষের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, দিনাজপুরের পাটকলগুলোয় মূলত হেশিয়ান ব্যাগ (পাতলা ব্যাগ), শেকিং ব্যাগ (মোটা ব্যাগ) ও সুতলি উৎপাদন হয়। সেই সুতলি যাচ্ছে বিভিন্ন হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে সুতলি দিয়ে কারুপণ্য তৈরি হচ্ছে। পাটকলে উৎপাদিত বস্তা দেশ-বিদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দিনাজপুরের পাটকলগুলো অধিকাংশই রফতানিমুখী।

এ পাটকলগুলো নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এসব কারখানার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শ্রমিকই নারী। এদিকে স্থানীয়ভাবে পাটকল গড়ে ওঠায় কৃষকেরাও পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রূপালীবাংলা জুট মিলস্ লিমিটেডের নারী শ্রমিক কুলসুম বলেন, আমাদের আগে হয় বাড়িতে বসে থাকতে হতো, না হয় ক্ষেতে কাজ করতে হতো। এখানে জুটমিল হওয়ায় আমরা কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারছি। এতে করে সংসারে সুদিন ফিরেছে।

রূপালী বাংলা জুট মিলস্ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক হামিদুর রহমান বলেন, ২০১১ সালে এ কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে প্রায় দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। তাদের গড় আয় মাসে ৯ হাজার টাকা। রূপালী বাংলা একটি শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান।

ফুলবাড়ী উপজেলার লাভলী জুট মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, পাট খুবই সম্ভাবনাময় একটি ফসল। দিনাজপুরে বেশ কয়েকটি জুটমিল গড়ে ওঠায় পাটের চাহিদা বেড়েছে। তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দৈনিক উৎপাদন এখন প্রায় ২০ টন। এর ৯০ শতাংশই বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এদিকে চাহিদা বাড়ায় দিনাজপুরে বাড়ছে পাটের উৎপাদন। উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছরে পাটের ভালো দর পাওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষে আবারও আগ্রহী হচ্ছেন। পাটের ফলন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চলতিবছর ৩০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে পাটবীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন