ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে গোবরমুঠি

জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে গোবরমুঠি

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে পাটকাঠি কিংবা বাঁশের শলায় গোবর মুঠিয়ে লাঠির মত করে সাজিয়ে রোদে শুকিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার করা লাকড়ি। উপজেলার সর্বত্র রাস্তার ধারে বাড়ির আঙ্গিনায় গৃহবধূরা পাটকাঠি কিংবা বাঁশের শলায় গোবর মুঠিয়ে লাঠির মত করে সাজিয়ে রোদে শুকিয়ে রান্নার কাজে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন। গোবরের তৈরি এ লাকড়ি চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলে বলে জানান গৃহবধূরা। নান্দাইল উপজেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার গৃহবধূ গোবরের আটিঁ দিয়ে তৈরি করা এ লাকড়ি দিয়ে রান্নার কাজ করেন।

নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লি ইউনিয়নের পালাহার গ্রামের দরিদ্র গৃহবধূ জহুরা খাতুন (৬৫) বলেন, মাত্র ৭ থেকে ১০টি কাঠি দিয়ে অনায়াসে ভাত তরকারি রান্না করা যায়। এ কাঠি দিয়ে রান্না করে গৃহিনীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। চুলায় দিলে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে জ্বলতে থাকে। এসময় গৃহিণীরা হাতের অন্যান্য কাজও সেরে নিতে পারেন।

একই এলাকার গৃহবধু রুমা আক্তার (৩৫) বলেন, জ্বালানি সংকট ও গ্যাসের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রস্তুতি হিসেবে ‘বর্ষা মৌসুমে গোবর সংগ্রহ করে গর্তে জমিয়ে রাখি। শীতকালে মুইঠ্যা (মুঠি) তৈরি করে মাঠে শুকাই। লাকড়ির অনেক দর থাকায় প্রায় সারাবছরই মুইঠ্যা (মুঠি) দিয়ে রান্না করতে হয়। আমরা শুকনো মৌসুমে মুঠি তৈরি করে শুকিয়ে ঘরে মজুদ করে রেখে দেই। বর্ষাকালে লাকড়ির খুব অভাব হয়। এ সময় কাঠের লাকড়ি ও সিলিন্ডার কেনার মত টাকা থাকেনা। শুকনো ঝরা পাতাও পাওয়া যায় না। এ দু:সময়ে মুইঠ্যা (মুঠি)অনেক উপকারে আসে।

মুশুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতিকার উদ্দিন ভূইয়া বিপ্লব বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে বেশি কষ্ট পোহাতে হয়। সেইসঙ্গে জ্বালানির অভাবে রান্না করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় গরীব গৃহিণীদের। এ অবস্থায় এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গোবরের তৈরি আঁটি।

নান্দাইল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাশিদা রহমান বলেন, কিছুদিন আগে এর ব্যবহার ছিল গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন মধ্যবৃত্ত শ্রেণির মানুষ এ গোবরের লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এ উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় গোবরের আটিঁ দেখা যায়। গৃহিণীরা গোবরের মুঠি দিয়ে রান্না করে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন