বায়ুর গুণগত মান সূচক বা একিউআই অনুসারে বাতাসে এই কণার মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ হলে তাকে ‘ভালো’ আর যদি ৫১ থেকে ১০০ হয় তাহলে তা ‘সন্তোষজনক’ বলে বিবেচনা করা হয়। গত নভেম্বরে ভারতের কোথাও কোথাও এই মাত্রা ৪০০-এর কাছাকাছি, এমনকি এর বেশিও রেকর্ড করা হয়েছে, যাকে ‘মারাত্মক’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই কণা মানুষের ফুসফুসে ঢুকে গিয়ে মারাত্মকর রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। দিল্লির সরকার বায়ু দূষণের মাত্রা কমাতে শহরে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করার কথাও বিবেচনা করছিল।
বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমাগত খারাপ হওয়ার কারণে ভারতে রাজধানী দিল্লিতে কর্তৃপক্ষ সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল। পাশাপাশি সব ধরনের নির্মাণকাজও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে পরিবহন এবং প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর কাজ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে ছিল। এছাড়াও শহরে যে ১১টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
জার্মানির রাজধানী বার্লিন দূষিত বায়ুর জন্য কুখ্যাত৷ স্থানীয় সরকার প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচলে নির্দিষ্ট গতি নির্ধারণ করে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে৷ পরিবেশবাদীরা বলছেন, জার্মানিতে যানবাহনে ডিজেল নিষিদ্ধের বিকল্প নেই৷
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শহরটি বাতাসে বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে৷ সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইডের উপস্থিতি৷ আর এই পদার্থটি ডিজেলচালিত গাড়ি বা ট্রাক থেকে বের হয়। জার্মান পরিবেশ সংস্থা ইউবিএ একটি নতুন গবেষণায় দেখেছে, বাতাসে যদি খুব কম মাত্রায়ও নাইট্রোজেন অক্সাইড থাকে, তাতে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ফুসফুসে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশু ভূমিষ্ট হওয়া– এমন নানা রোগ হতে পারে।
জার্মানিতে যেসব গাড়ি চলে, তার মধ্যে প্রতি তিনটির মধ্যে একটিতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। অচিরেই জার্মানির সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে দেশের সব শহরে বায়ুদূষণ রোধে ডিজেল চালিত গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা। কিন্তু গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর প্রতিবাদের মুখে তা এখনো কার্যকর হয়নি। তবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই নির্দেশ বাস্তবায়নের পক্ষে।
এছাড়া প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির গতি সীমিত করার কথা ভাবছেন বার্লিন কর্তৃপক্ষ। এ মাসের শেষ থেকেই ৫টি প্রধান সড়কে গাড়ির গতিসীমা প্রতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের কম রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। যদি এটি সাফল্য পায়, আরো অনেক সড়কে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে বার্লিন সেনেট।
তবে বাংলাদেশে বায়ুদূষণরোধে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশ দুষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫।
কোনো দেশে বায়ুমান সূচক ৩০০-এর বেশি ৩ ঘণ্টা থাকলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারির একটি আন্তর্জাতিক প্রবিধান রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ৩৮ দিন ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় বায়ুমান সূচক ৩০০-এর বেশি থাকলেও মানুষ তা জানারও সুযোগ পায়নি। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর সাম্প্রতিক গবেষণা এমন তথ্য ওঠে এসেছে। তাই সংগঠনটির পক্ষ থেকে রিয়েল টাইম বায়ুর মান জানানোর ব্যবস্থা করার দাবি তোলা হয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক