প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা দুজনই এক। শুধু পেরিয়েছে সময়। এসেছে টিকা, হয়নি হিসাব। পাল্টেনি সংখ্যা। হ্যাঁ, টিকার দাম ও সংখ্যা নিয়ে এমন প্রশ্ন ও উত্তর জানা গেলো জাতীয় সংসদে জামালপুর-১ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নোত্তরে।
তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘কোন কোন দেশ থেকে কত সংখ্যক টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে, পাশাপাশি এ জন্য কত টাকা খরচ হয়েছে’? গতকাল বুধবারে করা প্রশ্নটি তিনি গত বছর ১৮ নভেম্বরও করেছিলেন। সেসময় এবং এখন জবাব একটিই দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর তা হলো ‘দাম বলা যাবে না’।
অর্থাৎ এবারও করোনার টিকা কেনার খরচ নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জাতীয় সংসদে তিনি দাম জানাতে চান না। নন-ক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের দোহায়ে টিকা কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না বলে যুক্তি দিয়েছেন। সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে বলে দাবি তার। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী এ দাবি করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুইবার সংসদে টিকা কেনার খরচ প্রকাশ করাকে টপকে গেলেন। অবশ্য সংসদে না জানালেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বছর জুলাই মাসে ভ্যাকসিন কেনাসহ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করা হয়েছিলো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুইমাস আগে টিকা কেনার প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছিলেন এবারও সেটাই দিয়েছেন। এমনকি ওই সময় যত সংখ্যক টিকা দেশে আসার কথা বলেছিলেন, গতকাল প্রশ্নের জবাবেও একই সংখ্যক টিকা আসার কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ মন্ত্রীর দেওয়া জবাব অনুযায়ী গত ১৮ নভেম্বরের পরে দেশে কোনো টিকা আসেনি। অথচ এই সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিকা আসার তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রশ্নোত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত (১৮ জানুয়ারি ২০২২) ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টিকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় দুই কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার সিনোফার্ম, চীন হতে ৭ কোটি ৭০ লাখ সিনোফার্ম ও সাত কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার সিনোভ্যাকসহ মোট ১৫ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার এবং ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, চীন, ভারত ও কোভ্যাক্স হতে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত এবং অর্থ বিভাগ, সিসিজিপি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভ্যাক্সিন কেনা হয়েছে। নন-ক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।
এর আগে, ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনা চিকিৎসার ব্যয় জানানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ডোজ ৩ হাজার টাকা হিসেবে মোট ৩ হাজার ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে এ পর্যন্ত (১৮ জানুয়ারি) আট কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৬ জন করোনার টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এ সময়ে ৯ কোটি তিন লাখ ৯১ হাজার ৮৩৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ এবং ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯ শ জনকে বুস্টার ডোজসহ সর্বমোট ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৬ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না থাকায় রেজিস্ট্রেশনের চেয়ে টিকা প্রদান বেশি হয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক