ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কঁচায় নদী নেই শুধুই চর!

কঁচায় নদী নেই শুধুই চর!
  • নদীর তিন ভাগের দুই ভাগই চর
  • নাব্যতা সংকটে বিলুপ্তপ্রায় নৌপথ
  • জোয়ারের অপেক্ষায় থাকেন নৌযাত্রীরা

নদীর টগড়া-চরখালী রুট দিয়ে চলাচল করে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ রুটের যানবাহন। নব্যতাসংকটে অনেকক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও জরুরি চিকিৎসাসেবা। প্রতিদিন সহস্রাধিক যানবাহনসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষ পারাপার হয়। জোয়ারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে আটকে থাকতে হয় গাড়ি ও যাত্রী বোঝাই ফেরি। ফেরি চালকদের শঙ্কা দ্রুত নদী খনন করা না হলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে নৌরুটে ফেরি চলাচল

রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক সময়ে খননের অভাবে প্রতিদিনই নাব্যতা সংকটে পড়ছে পিরোজপুরের অন্যতম প্রধান নদী কঁচা। যার ফলে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪টি রুটের যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীরা। ব্যাহত হচ্ছে জেলার সঙ্গে উপজেলার সকল যোগাযোগ। টগড়া-চরখালী রুটের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ও যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুতই নদীর ডুবোচর অপসারণ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দবি স্থানীয়দের। তবে কঁচা নদীর নাব্যতা সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পিরোজপুর সড়ক বিভাগ।

জেলার প্রধান বৃহৎনদী কঁচা। নদীর স্রোত কমে যাওয়া ও যথাযথ ড্রেজিং এর অভাবে এ নদীর টগরা পয়েন্টে আরো প্রায় একদশক আগে থেকে চর পড়া শুরু হয়। বর্তমানে ফেরীঘাট পয়েন্টের ৪ কিমি. উজানে ব্যাকুটিয়া ফেরী নির্মিত হওয়ায় চরের অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ সমস্যা নদীর প্রায় অর্ধেকটাজুড়ে। প্রায় দুই কিলোমিটার চওড়া এ নদীটি পার হতে বছরের অন্যান্য সময় ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগলেও, শীতমৌসুমে এ চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। এ সময় নদীতে পানি কমে যাওয়ায় প্রায়ই ফেরি আটকা পড়ে ডুবোচরে। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরি আটকে থাকে নদীর মাঝে। এতে বিপাকে পড়ে এ নদীর টগড়া-চরখালী ফেরিরুট দিয়ে চলাচল করা ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ রুটের যানবাহন। অনেকক্ষেত্রে ব্যহত হচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকান্ড ও জরুরি চিকিৎসাসেবা। প্রতিদিন টগড়া-চরখালী ফেরিঘাট থেকে প্রায় সহস্রাধিক যানবাহন ও ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ পারাপার হয়। অন্যদিকে যতক্ষণ নদীতে জোয়ার না আসে, ততক্ষণ এ অপেক্ষা চলতে থাকে। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা নদীতে আটকে থাকতে হয় গাড়ি ও যাত্রীবাঝাই ফেরি।

আবার নদীতে ফেরি আটকে থাকায় মূল্যবান সময় নষ্টসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় গাড়িচালক ও যাত্রীদের। এছাড়া ভাটার সময় পন্টুন অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় ফেরিতে গাড়ি উঠতেও অনেক সমস্যা হয়। ফেরি চালকদের শঙ্কা নদী খনন না হলে হয়তো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ রুটের ফেরি চলাচল।

ফেরি কর্মচারি মজিবুর রহমান খান জানান, নদীর চরের কারণে পানি কমলেই ফেরি চলাচল বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। গাড়ি ফেরিতে উঠানো যায়না। আর লোড ট্রাকের তো প্রশ্নই আসে না। তীর থেকে নদীর ২ অংশই চর।

ফেরির আরেক কর্মচারি জাহাঙ্গীর জানান, নদীর ৩ ভাগের ২ ভাগেই চর পড়ে গেছে। ভাটির সময় তো ফেরি চালাতে পারি না, বন্ধ করে রাখা লাগে। জোয়ার যখন আসে তখন আবার ফেরি চলে। আবার মাঝে মাঝে যাত্রী ও গাড়ি নিয়ে মাঝ নদীতে ভেসে থাকতে হয়।

যাত্রী আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার বলেন, সকালে পানি কম থাকে বিধায় ফেরি চলতে পারে না, চরে আটকে যায়। এভাবে প্রতিনিয়তই আমাদের পারাপারে ভোগান্তির শেষ থাকে না। ট্রলারও থাকে না, যেটুকু থাকে তাতে ট্রলারও ঠিক মতো পাওয়া যায় না। আর কুয়াশা তো আছেই। গত বছর দেখছিলাম নদী কাটছিল। তা তো আবার সেই ভাবেই ভরে গেছে।

ইজারাদার আজমীর হোসেন মাঝি বলেন, ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ রুটে যানবাহন টগড়া-চরখালী ফেরিরুট দিয়ে চলাচল করে। এখান থেকে অনেক গাড়ি ও যাত্রী পারাপার করে। নদীর ডুবোচরের কারণে ফেরি ভাটার সময় বন্ধ রাখতে হয়। জোয়ার না হলে ফেরি নিয়ে বসে থাকতে হয়। ইজারাদার হিসেবে আমরাও লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। যদি দ্রুত নদী খননের কাজ না নেয়া হয় তবে জোয়ারের সময়ও ফেরি চালানো সম্ভব হবে না। আর একটু জোরালো পদক্ষেপ নিলে আমরা আমরা এ সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত হবো।

পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তুহিন আল মামুন জানান, চরখালীতে আমাদের যে ফেরিটি চলছে সেটি মূলত নাব্যতা সংকটের কারণে বিভিন্ন জায়গায় আটকে যাচ্ছে। এ নাব্যতা সংকট নিরসনের প্রধান কাজ মূলত করে থাকে বিআইডব্লিটিএ। ফেরি আটকে গিয়ে বিড়ম্বনার স্বীকার হওয়ার বিষয়টি বিআইডব্লিটিএ এর উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ও চিঠি দিয়েছেন। নদীড্রেজিং এর বিষয়টি নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে সম্প্রতি পাশ হয়েছে। তারা জানিয়েছে দ্রুত নদীড্রেজিং এর কাজ শুরু করবে।

জেলা প্রশাসক আবু আলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, পিরোজপুর জেলার চরখালী ফেরির মাধ্যমে মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া-বরগুনাসহ ১৪ রুটে অনেক মানুষ চলাচল করে থাকে। প্রতিবছরই শীতমৌসুমে ভাটার সময় চরের কারণে ফেরি আটকে যায়। যার কারণে এবারও আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করেছি।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন