দিনাজপুরে কয়লা সংকটের কারণে ইট উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ইটভাটা মালিকরা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে এমন শঙ্কা উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। দিনাজপুর জেলায় দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে আসছে ইটভাটা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বিভিন্ন বিধিনিষেধ চড়াই উৎরাই, ঝুট-ঝামেলা মোকাবেলা করে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসলেও এবার তারা ধরাশায়ি বলে জানিয়েছেন।
তারা জানান, জ্বালানী সংকট কয়লার অভাব ও আড়াইগুণ উচ্চমূল্য দিয়ে কয়লা মিলছে না। প্রতিবছর ভারত থেকে কম দরে কয়লা এনে ইট পোড়ানো হতো। চলতি মৌসুমে সবকিছু উলোট-পালোট হয়ে গেছে। ভারত পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ করছে না এবার। এতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায় আড়াইগুণ বেশি। গতবছর ১ টন কয়লা কেনা পড়তো ৮ হাজার টাকা। এবার ১ টন কয়লা কেনা পড়ছে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এর কারণ ভারত থেকে কয়লা আমদানি প্রক্রিয়া ও কয়লা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পার্বতীপুর কয়লাখনি থেকে ইটভাটা প্রতি ১০০ টন করে কয়লা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। ভাটায় কাঠ-খড়ি পোড়ানোও নিষিদ্ধ। তাছাড়া পর্যাপ্ত খড়ি পাওয়া কঠিন। প্রতিটি ভাটায় ৫০০ থেকে ৭০০ টন কয়লা দরকার প্রতি মৌসুমে।
দিনাজপুর জেলায় প্রায় ২৩২ ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ভাটার রয়েছে ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ। ঋণের বোঝায় জর্জরিত অনেক ইটভাটা মালিক। স্বাভাবিক মূল্যে কয়লা না পেলে এবার তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হবে। প্রতিটি ভাটায় প্রায় ২ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। তাদের পরিবার পরিজনকে নিয়ে জীবন-যাপন করে। ২৩২ ভাটায় এবার কাজ করার কথা ৪৬ হাজার ৪০০ শ্রমিক। তবে কয়লা সংকট ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি ভাটায় কাজ করছে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেক। ফলে চলতি বছর খাদ্যভাব হবে হাজার হাজার পরিবারে।
চিরিরবন্দর উপজেলার আরকে ভাটার মালিক রাজ্জাক শাহ জানান, ইন্দেনেশিয়া, অফ্রিকা চিন থেকে যেসব কয়লা উচ্চমূল্যে আমদানি করা হচ্ছে তা নিম্নমানের এবং চাহিদার তুলনায় কম। বিরল উপজেলার এমএনবি ভাটার মালিক ইসমত আরা বলেন, আমরা সরকারি নীতিমালা মেনে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করছি। সরকার সব ক্ষেত্রেই সফল, আমাদের ইটভাটা সেক্টরের প্রতি জরুরিভাবে নজর না দেয় তাহলে এ বছর ইট উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
বীরগঞ্জ উপজেলার ইটভাটা মালিক এরশাদুল বলেন, গতবছর ১ হাজার ইট উৎপাদনে খরচ ছিলো ৭০০০ থেকে ৭২০০ টাকা। বিক্রি ছিলো ৭৭০০ থেকে ৮০০০ টাকা। এবার প্রতি হাজার ইটের উৎপাদন খরচ পড়বে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। এতে ইটবিক্রি করতে হবে আরো বেশি দরে। অচিরেই সরকার যদি কয়লার উচ্চমূল্য ও সংকটের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ বছর ইট উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাঘাত ঘটবে। যা সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও ক্ষতির সম্মুখিন হবে। সচেতন মহল দেশের উন্নয়নে ইট প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
আনন্দবাজার/শহক