চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। এখনও আগের উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চিনি। মিলাররা বলছেন সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তারা দামও কমিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আগের দামেই কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম কমানো যাচ্ছে না।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত একমাসে চিনির দাম বেড়েছে মণ প্রতি প্রায় ১৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর কমলেও দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। ফলে চিনির দাম বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে শুল্ক-কর না কমায় দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করছেন তারা।
আসছে গ্রীষ্মকালীন মৌসুম ও রোজা। এ সময়ে চিনির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিতে মিল পর্যায়ে এখন চিনির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরেই চিনির পাইকারি দাম বাড়ছেই। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৩০ টাকা দরে, যা একমাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সে হিসেবে, একমাসের ব্যবধানে পাইকারিতে চিনির দাম বেড়েছে প্রতিমণে ১৩০ টাকা।
রাজাধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন রমজানে চিনির ব্যাপক চাহিদা থাকে। ফলে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যাতে রমজান মাসে উচ্চমুল্যে চিনি বিক্রি করতে পারে। এ কারণে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ছয়মাস ধরে খাতুনগঞ্জসহ দেশীয় বাজারে চিনির বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ের মধ্যে চিনির দাম মণে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সর্বশেষ গত একমাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৩০ টাকা। আর্ন্তজাতিক বাজারে চিনিসহ নিত্য ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বুকিংয়ের কারণে মূলত ছয়মাস আগে থেকেই দেশীয় বাজারে চিনির দাম বাড়ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে জানান, দেশীয় বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত চিনি মজুদ রয়েছে। এরপরও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের চেয়ে মণপ্রতি ২০০ টাকার বেশি কমেছে।
পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিকভাবে শীত মৌসুমে চিনির চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। কিন্তু বেসরকারি কোম্পানির বিপরীতে রাষ্ট্রায়াত্ব চিনির সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। এমনকি আর্ন্তজাতিক বাজারে চিনির দাম তেমন না বাড়লেও স্থানীয় বাজারে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
খাতুনগঞ্জের চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ গণমাধ্যমকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে, বিষয়টা সত্যি। কিন্তু কম দামে বুকিং হওয়া চিনি এখনো বাজারে পৌঁছেনি। বর্তমানে বাজারে যেসব চিনি রয়েছে তা আগের বাড়তি দামে কেনা। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কম দামে বুকিং দেওয়া চিনি বাজারে আসলে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে দেশীয় বাজারেও চিনির দাম কমতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন এ ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এবং টিসিবি’র তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশে চিনির মোট চাহিদা ১৫ থেকে ১৭ লাখ টন। মোট চাহিদার এক থেকে দেড় লাখ টন চিনির যোগান আসে রাষ্ট্রায়াত্ব ১৫টি কারখানা থেকে। এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় সরকার টিসিবি’র মাধ্যমেও কিছু চিনি আমদানি করে থাকে। অর্থাৎ, চাহিদার প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ চিনির যোগান আসে সরকারিভাবে। বাকি চিনির যোগান আসে বেসরকারি কারখানা থেকে।
আনন্দবাজার/শহক