ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাপটে ‘এ’ ক্যাটাগরি শেয়ার

শেয়ার

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিনিয়োগ ঝুঁকি (সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত-পিই রেশিও) পূর্বের চেয়ে গেল সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) কিছুটা বেড়েছে। তবে ডিএসইর টপটেন লেনদেন এবং গেইনারে ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ার দর কদর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেন এবং গেইনারে অবস্থান করেছে।

গেল সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ৮৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার। এর মধ্যে টপটেন লেনদেনে থাকা কোম্পানিগুলো একাই ৩৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বা ২ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা ‘বি’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকো একাই ৪৭৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।

ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনার তালিকায় ৯০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে ৪০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া টপটেন লেনদেনে ৯০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট ছিল। এদের মধ্যে টপটেন গেইনারে ১০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরির শেয়ার অবস্থান করেছে। লুজারে ২০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি, ৩০ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরি এবং ১০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। এছাড়া টপটেন লেনদেনে ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। এই ধরনের চিত্রকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হচ্ছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা।

ডিএসইর সূত্রমতে, গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৬ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৮ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৭ শতাংশ।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগের জন্য পিই রেশিও এক ঘরের সংখ্যা নিরাপদ। এই নিরাপদ সংখ্যা ১৫ পর্যন্ত ধরা যেতে পারে। তবে ১৫ সংখ্যার ঊর্ধ্বে চলে গেলে বিনিয়োগে ঝুঁকিরমাত্রা বাড়তে থাকে। ডিএসইর পিই রেশিও বর্তমানে ১৬ দশমিক ৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সেই হিসেবে ডিএসইতে বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা নিরাপদ অবস্থানে এখনো আসেনি। ডিএসইতে বিনিয়োগ মাত্রা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো বিধায় নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। আবার যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া ‘এন’ ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহ শেষে পিই রেশিও অবস্থান করেছে ব্যাংক খাতের ৮ দশমিক ১০ পয়েন্টে, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের ১৩ দশমিক ৩০ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ১৭ দশমিক ১০ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৮ দশমিক ২০ পয়েন্টে, ওষুধ রসায়ন খাতের ১৯ দশমিক ১০ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ১৯ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ১৯ দশমিক ৯০ পয়েন্টে, সাধারণ বীমা খাতের ২০ দশমিক ৫০ পয়েন্টে, সেবা আবাসন খাতের ২৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে, নন ব্যাংকি আর্থিক খাতের ২৬ পয়েন্টে, খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের ৩১ দশমিক ৩০ পয়েন্টে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৩৪ দশমিক ১০ পয়েন্ট এবং সিরামিক খাতের ৩৭ দশমিক ৭০ পয়েন্টে ।

গেল সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৬টির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল। সপ্তাহটিতে লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনারে শীর্ষে উঠে আসে। গেল সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২১৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে কম ছিল। লেনদেন মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই কমার মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজারের শীর্ষে উঠে আসে। এছাড়া সপ্তাহটিতে ‘বি’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকোর শেয়ার অর্থের পরিমানে লেনদেন শীর্ষে উঠে আসে। ওই সপ্তাহে কোম্পানিটি ৪৭৩ কোটি ৮৮ লাখ ২ হাজার টাকা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়। এ মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে।

গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রংপুর ফাউন্ড্রি ৪২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, প্রান ৩৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ, আরএকে সিরামিক ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, তিতাস গ্যাস ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, লাভেলো আইসক্রিম (‘এন’ ক্যাটাগরি) ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং ওয়াটা কেমিক্যাল ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।

টপটেন লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেডিএস এক্সেসরিজ ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েল (‘জেড’ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, শ্যামপুর সুগার (‘জেড’ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, সী পার্ল বিচ রিসোর্ট (‘বি’ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ই-জেনারেশন (‘এন’ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৬৯ শতাংত, অগ্নি সিস্টেমস (‘বি’ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং আর এন স্পিনিং (‘জেড’ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

এছাড়া টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে পাওয়ার গ্রিড ৪২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৩৬৪ কোটি ২২ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ২৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, তিতাস গ্যাস ২১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস ২১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ১৯৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৯২ কোটি ৭ লাখ টাকা, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৮০ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং জিপিএইচ ১৩৯ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন