ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নে বাধা ‘বাঁশের সাঁকো’

উন্নয়নে বাধা ‘বাঁশের সাঁকো’

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকোটির স্থলে একটি সেতু নির্মাণে এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিনের। তবে স্থানীয়দের এ দাবি আমলে না নেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা নাওডাঙা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি গ্রাম। এ গ্রামের মধ্যস্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বারোমাসিয়া নদী। নদীটি বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের গোরকমন্ডল এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রায় ৩ কি. মি. প্রবাহিত হয়ে ধরলায় মিলিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রচন্ডবেগে পানি প্রবাহিত হয় নদীটি দিয়ে। এখনও নদীটির কোথাও কোথাও বেশ গভীরতাও রয়েছে। নদীর পশ্চিম ও পূর্বপাড়ের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নিজের উদ্যোগে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করেন দু’পাড়ের মানুষ। তবে বাঁশের সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ চলাচল করে এ সাঁকো দিয়ে। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থী ও মুমর্ষরোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। আর নদীর দু’পাড়ের ৬ গ্রামের জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি। এছাড়াও যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষক।

সাঁকোটির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে পশ্চিম কান্তাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোরুকমন্ডপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফয়জুল উলুম মাদ্রাসা, গোরুকমন্ডপ কমিউনিটি ক্লিনিক। পূর্বপাড়ে রয়েছে পশ্চিম ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালারহাট আর্দশ স্কুল এন্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ ও পশ্চিম ফুলমতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক। নদীটির দু’পাড়ের গ্রামগুলোর থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ হাজারও লোকের যাতায়াত ও যোগাযোগের জন্য একমাত্র ভরসা। ফুলমতি, জামাকুটি, কলাবাগান, আনন্দবাজার, খারুয়া গ্রামের অধিবাসীরা। যোগাযোগ বিছিন্ন থাকায় ওই গ্রামগুলোতে ছোয়া লাগেনি ডিজিটাল উন্নয়নের। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলেও প্রধান বাঁধা বারো মাসিয়া নদীর ইন্দুর ঘাটের বাঁশে সাঁকো। নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ বলেন, সাঁকোটি দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। একবার পা পিচলে পড়ে আহত হয়েছি। এখন সাবধানে সাঁকোতে উঠে চলাচল করছি। এখানে সেতু দিলে ভালোই হতো।

পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের মীর হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে চল্লিশ বছর ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। সুস্থ মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন। জনপ্রতিনিধিরা কথা দিয়ে ভোট নেন। ভোট পার হলে তারা আর খোঁজ রাখেন না।

নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ  আব্দুল হানিফ সরকার জানান, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে ভাঙ্গাসাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে।  তা ছাড়াও কৃষকদের পণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখানে সেতু নির্মাণ করা হলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছেন আলী এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, বারোমাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন। অনেক আগে থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত সেতু নিমার্নের চেষ্টা করা হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আসিক ইকবাল রাজিব  বলেন, বারো মাসিয়া নদীর ওপর ৩০ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো  হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন