ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ভয় ওমিক্রন

প্রণোদনা প্যাকেজ

সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পেলেও বিগত সময়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের এখন বড় ভয় নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। প্রান্তিক পর্যায়সহ কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে দুই হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় জামানত ছাড়াই তারা ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ঋণ সুবিধা নিয়ে যখন ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা ঠিক তখনই ওমিক্রনের চোখ রাঙানি দেখতে হচ্ছে তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, বিগত সময়ে করোনা মহামারিতে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে প্রয়োজনীয় জামানত দিতে পারছিলেন না। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও শুধু জামানত না দিতে পেরে তারা ঋণ পেতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এসব বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (সিজিএস) ইউনিটের সঙ্গে সঙ্গে ঋণ বিতরণের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ম্যানুয়াল-২০২০ প্রণয়ন করা হয়।

সেই আলোকেই বিগত ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ গ্যারান্টির পরিমাণ সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গ্যারান্টির মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। চার শতাংশ সুদে ঋণের সুযোগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৩৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়। যদিও সুবিধা দিয়েছে মাত্র ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সূত্রমতে, গত দুই বছরে ৫৮৪টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দিয়েছে তারা। এর মধ্যে, সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে ৩১০টি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে ৩৩ কোটি টাকা এবং তার আগের বছর ২০২০ সালে ২৭৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে চাহিদা বিবেচনা করে আরো বেশি গ্রাহককে সুবিধা দিতে ২৫ হাজার টাকার ঋণকেও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার ঋণ এই স্কিমের সুবিধা পাবে। এর আগে এই স্কিমের আওতায় সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার ঋণে গ্যারান্টি সুবিধা ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিজিএস ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক এস এম মোহসীন হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এছাড়া, ১০ টাকা, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষক, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের উদ্যোক্তাদেরও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আরো একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যদিকে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন হয়েছে ৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঋণ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৭ জন নারী উদ্যোক্তা। এসব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, তবে এর মধ্যে সরকার ৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে।

তবে গেল কয়েক মাস ধরে করোনা মহামারির প্রকোপ কমে আসায় দেশের অন্যান্য খাতের মতোই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। ঋণ সুবিধা নিয়ে ব্যবসা ও ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে আবারো সচল করে। যারা গ্রামে ফিরে গিয়েছিল তাদের অনেকেই আবারো শহরে ফিরে আসে। আর যারা গ্রামে থেকেই ব্যবসা বা শিল্প পরিচালনা করছিলেন তারাও নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে। তবে হঠাৎ করেই সম্প্রতি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে দুঃসংবাদ পাচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে সরকারের ১৬ দফা নির্দেশনা জারি হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন আর্থিক খাত আবার স্থবির হয়ে যেতে পারে। এতে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়তে পারেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন