করোনা মহামারির কারণে উৎসব না হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। যদিও বেশ কয়েক বছর যাবত ইংরেজি নতুন বছরের শুরুর দিন বই উৎসব করছে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালে বই উৎসবকে কেন্দ্র করে বর্ণিলভাবে সাজানো হলেও বৈশ^য়িক পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
গতকাল শনিবার (১ জানুয়ারি) থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে, তবে হচ্ছে না উৎসব। এবারের শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠ্যপুস্তক ও ৫টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে। তবে, এ বছরের প্রথমদিনে সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে নতুন বই পাবে শিক্ষার্থীরা।
২০১২ সাল থেকে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছে। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে একযোগে বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারির উপস্থিতিতে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বই বিতরণ উদযাপিত হয়ে আসছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টি, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জন্য ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪ টিসহ মোট ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক-পঠন-পাঠন সামগ্রীর মধ্যে আমার বই এবং অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে যথাক্রমে ৩৩ লাখ ২ হাজার ৭৪০টি।
অন্যদিকে জেলা-উপজেলা ও থানার জন্য ৫১২টি উপজেলা ও থানায় বাংলা ভার্সনে এবং ৫৬টি জেলায় ইংরেজি ভার্সনের বই বরাদ্দ করা হবে। প্রথম শ্রেণিতে মোট ১ কোটি ২৪৯৬ হাজার ৪৯৪টি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ৫১২টি উপজেলা ও থানায় ১ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৯টি, ইংরেজি ভার্সনে ৫৬টি জেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৫টি বই বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে মোট ১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯ টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ১ কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২৯টি। তৃতীয় শ্রেণিতে মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ১৮৬ টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৮ টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ২লাখ ৫ হাজার ৮৩৮ টি। চতুর্থ শ্রেণিতে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭টি বইয়ের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৭টি এবং ইংরেজী ভার্সনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০টি বই বিতরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫২৩টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ১৯৩ টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩০ টি।
এছাড়া ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নঁওগা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই মোট ২০টি জেলায় সরবরাহ করা হবে।
২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪০০ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে।
আনন্দবাজার/ টি এস পি