ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগরকন্যা কুয়াকাটা বর্ষবরণে পর্যটকের ঢল

  • সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগে বেলাভূমিতে পদচারণা
  • দুই বছরের করোনা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা
  • হোটেল মোটেল ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
  • পর্যটক টানতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ

বিশ্বজুড়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানানোর রাত থার্টি ফার্স্ট নাইট (৩১ ডিসেম্বর) ঘিরে থাকে কোটি মানুষের উচ্ছ্বাস। দেশে এ আনন্দ উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। ইংরেজি বছরের শেষ সূর্যাস্ত ও নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য দর্শনের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত তারা।

পর্যটকদের বরণ করতে প্রতিবছর সব ধরনের প্রস্তুতি থাকে কুয়াকাটায়। এবারও ভিড় জমে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটকের। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও সাজানো হয়েছে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন স্পটগুলো। অধিকাংশ হোটেলের রুম বুকিং শেষ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ দুই বছরের করোনার ক্ষতি খানিকটা হলেও সামলে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।

এদিকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে সে জন্য রুম ভাড়ার তালিকা টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক। এছাড়া কুয়াকাটায় যে কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নজরদারি থাকছে প্রশাসনের তরফ থেকে। পর্যটন পুলিশ, থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ আগে থেকেই অসংখ্য পর্যটকদের আগমন মাথায় রেখে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, এবারও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আগত পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে ১৮ কিলোমিটারের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পর্যটকদের অবিরাম ছুটে চলা লাল কাঁকড়া, শুটকি পল্লী, লেবুর বন, ঝাউবন, ঝিনুক চর, তিন নদীর মোহনা, মিশ্রি পাড়া, বৌদ্ধ মন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, গঙ্গামতির লেক।

কুয়াকাটায় ১৬০টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। প্রায় ৮ হাজার মানুষের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। গত দুই বছর করোনার কারণে প্রতিটি হোটেল ব্যবসায়িসহ পর্যটক নির্ভর ক্ষুদ্র – মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীদেরও লোকসানের কারণে ঘাম ঝড়েছে কপাল থেকে। তবে চলতি বছর পর্যটকদের উপস্থিতি বেশ ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

হোটেল-মোটেল ব্যবসায়িরা জানিয়েছে, থার্টিফাস্ট নাইটে স্থানীয়ভাবে কোনো আয়োজন না থাকলেও সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসসহ কয়েকটি অভিজাত আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য ইনডোরে ডিজে পার্টি, কনসার্ট, ফানুস উৎসব ও খাবারের উপর বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। নতুন বছরে সমুদ্রসৈকতে বেড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন অনেক পর্যটক। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণির আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর অধিকাংশ রুমই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

ট্যুরিজাম ব্যবসায়িরা জানান, পায়রা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। এ বছর থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে পর্যটকের ব্যাপক সমাগমের আশা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস’র জেনারেল ম্যানেজার আল আমিন বলেন, থার্টিফাস্ট নাইটে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ প্রণোদনা অফার। ১২শ’ টাকার টিকিটে ৩০ থেকে ৩৫ আইটেমের গালা ডিনার। এর সঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন লাইভ কনসার্ট, ডিজে পার্টি ও ফানুস উৎসব। এ উপলক্ষ্যে তাদের রিসোর্টের ৬০ ভাগ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার জানান, তাদের সমিতির আওতাভুক্ত আবাসিক হোটেলের সকল রুমই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। তবে কোনো হোটেল মালিক যেন পর্যটকের ভিড়কে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে এজন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হবে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টায়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটায় পুরো ডিসম্বর মাসজুড়েই অসংখ্য পর্যটকরা ভ্রমণে আসেন। গত দুই বছর করোনার কারণে তেমনটা না হলেও এবছর আবার আগের মতোই উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে কুয়াকাটায়। বিশেষ করে বছরের শেষ দিনে সমুদ্র সৈকত এলাকা কানায় কানায় ভরে যায়। তিনি বলন, ট্যুর অপারেটরস, কুয়াকাটার পর্যটনমুখী ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় মানুষ পর্যটক সেবায় খুবই আন্তরিক। এখানে পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। কক্সবাজারের মত এখানে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, ইংরেজি নতুন বছরে অসংখ্য পর্যটকের আগমনকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে। এছাড়া দর্শনীয় স্পটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, আবাসিক হোটেল মোটেলগুলোতে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে এজন্য ভাড়ার তালিকা টানিয়ে রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার/এজে

সংবাদটি শেয়ার করুন